বাজাও আমারে বাজাও (প্রথমাংশ)
লেখক: নীরদ হাজরা
এক
আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগের কথা, না তার থেকেও অনেক বেশিদিন আগের কথা, ঠিক কবেকার কথা, কেউ তার হিসেব রাখে নি।
শুরু হয়েছে ভবানীপুর সঙ্গীত-সম্মেলন।
শুধু সঙ্গীত-সম্মেলন বললে এর প্রকৃত পরিচয় বোঝানো যাবে না, একে বলতে হবে উচ্চাঙ্গ বা শাস্ত্রীয় সঙ্গীত-সম্মেলন। এখনে লোকসঙ্গীত বা কোন রকম লঘুসঙ্গীতের স্থান নেই, শুধুই রাগ-রাগিনীর আলাপ-কলাপ। এ গান যে কেউ গাইতে পারে না, যে কেউ এ গান শুনতেও যায় না।
কারণ কী? কারণ, অন্য দেশের মতো ভারতীয় সঙ্গীত সাধকেরা গানকে সা থেকে নি পর্যন্ত সাতসুরের মধ্যে বেঁধেই খুশি হন নি, ঐ সাত সুরকে বাইশ শ্রুতিতে ভাগ করেছেন তাঁরা। সা থেকে রে-র মধ্যেই রেখেছেন চার-চারটে ঘাট। এই বাইশ শ্রুতির আবার তিনশ ষাটটি তাল। এত সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ধ্বনির পার্থক্য নিয়ে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের কারবার। এইসব ধ্বনির নানারকম বিন্যাসে গড়ে উঠেছে এক-এক রাগ, এক-এক রাগিণী, এদের মিলনে সৃষ্ট হয়েছে আরো কত নূতন রূপ! এত কিছু আয়ত্ত করতে পারলেই তবে হওয়া যায় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের গায়ক বা বাদক; স্বরের এই সূক্ষ্ম পার্থক্য ধরতে না পারলে বা রাগ-রাগিণীর পার্থক্য সম্পর্কে স্পষ্ট জ্ঞান না থাকলে হওয়া যায় না শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের শ্রোতা। এ সঙ্গীতের আসরে সাধারণ মানুষ গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনলে হয়ত তন্ময় হতে পারবেন, কিন্তু তারিফ করতে পারবেন না।
ভাবছ, তাহলে এ সম্মেলনে কি শ্রোতা হয়? হয়, খুবই হয়। কারণ, সারা দেশে যত সঙ্গীত-পাগল লোক আছেন, তাঁরা তো এমন সম্মেলনের সংবাদের জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকেন। একবার ঘোষণা হলেই হয়, অমনি তাঁরা তল্পিতল্পা বেঁধে এসে হাজির, বিশেষ করে ভবানীপুর সঙ্গীত-সম্মেলনের নাম শুনলে। কারণ, ভবানীপুর সঙ্গীত-সম্মেলনের বিশেষ মর্যাদা আছে, ভারত-বিখ্যাত বিশেষ-বিশেষ ঘরানার শিল্পীরা এ সম্মেলনে এসে হাজির হন। তাঁদের জন্যেই এই সম্মেলনের এত কদর।
বুঝেছি, প্রশ্ন করছ, ঘরানা কী? ভারতীয় সঙ্গীতের জগতে ঐ এক বিপদ। যদি কোন সঙ্গীত-ওস্তাদ বিশেষ কিছু আবিষ্কার করে ফেললেন, তবে সেই বিশেষ কায়দা তিনি নিজের উত্তরাধিকারী বা আত্মীয় ছাড়া আর কাউকে শেখান না। ফলে ঐ সঙ্গীত-সম্পদ তাঁর ঘর ছাড়া হতে পারে না। একেই বলে ঘরানা। ঐ ঘরানার কিছু শুনতে চাইলে ঐ বংশের শিল্পীকেই আনাতে হবে। কিন্তু আসা না আসা তো তাঁর মর্জি। এ যেন সঙ্গীতের রাজ্যে সাম্রাজ্যবাদ।
ভবানীপুর সঙ্গীত-সম্মেলনে এমন অনেক সঙ্গীত-সম্রাট আসেন। তাই শ্রোতাদের কাছে এ সম্মেলনের আকর্ষণ প্রবল।
সেবার জমে উঠেছে সম্মেলন। কয়েক রাত গাওয়া হয়ে গেছে। সম্মেলনের শেষ দিক। যতই শেষ হয়ে আসছে, ততই জমে উঠছে আসর। বিখ্যাত শিল্পীরা ততই আগ্রহে তাঁদের সাধনার ধন উপহার দিচ্ছেন শ্রোতাদের। শ্রোতারাও নূতন-নূতন প্রগতির আনন্দে উদ্বেল হয়ে উঠছেন। উৎকণ্ঠায়, আগ্রহে অপেক্ষা করছেন আরো নূতন কিছু পাওয়।র জন্যে।
সেবারে শ্রোতার আসরে বসে আছেন মুর্শিদাবাদের মহারাজা মনীন্দ্রচন্দ্র নন্দী। সুরের আবেশে ভরপুর তাঁর মন। পাশের লোকটিকে একসময় তিনি বললেন, শ্যামলবাবু, আপনার নূতন সংগ্রহ এই আসরের সুর কেটে দেবে না তো?
শ্যামলাল হাসলেন। তিনি নিজে শিল্পী নন, তবে অদ্ভুত সঙ্গীত-পাগল লোক। ছিলেন বড়বাজারের ব্যবসায়ী। ব্যবসা আছেও। কিন্তু তিনি ঘুরে বেড়ান খ্যাত-অখ্যাত শিল্পীর দুয়ারে দুয়ারে যদি কিছু অবিস্মরণীয় শোনা যায়, এই আশায়।
এই শ্যামলাল ক্ষেত্রী দিন কয় আগে হেদুয়ার কাছে পুঁটিয়ারাণীর বাড়িতে গিয়েছিলেন কয়েকজন ভারত-খ্যাত শিল্পীর সন্ধানে। এসব শিল্পী কলকাতায় এলে ওঠেন পুঁটিয়ারাণীর বাড়িতে। সেবার এসেছিলেন লছমীপ্রসাদ, এমদাদ খাঁ, বিশ্বনাথ রাও প্রমুখেরা। শ্যামলাল সেখানে গিয়ে একজন নূতন শিল্পীর সন্ধান পেলেন। বীনকার লছমীপ্রসাদ তাঁকে গোপনে ডেকে বললেন, শ্যামলাল, ঐ যে লোকটাকে দেখছ, ও আমাকে অবাক করেছে। বাজায় সরোদ। আমি বলছি, লোকটা ভারত জয় করবে।
লোকটাকে দেখে শ্যামলালের পছন্দ হয় নি। এ-ই না কি ওস্তাদের চেহারা! তবু লছমীপ্রসাদের কথা তো অবহেলা করা যায় না। তাঁর মতো মানুষ বাজে কথা বলবেন না। সেই কথার উপর নির্ভর করেই লোকটিকে সম্মেলনে টেনে এনেছেন শ্যামলাল। তার কথাই বলেছেন মনীন্দ্র নন্দীকে। সম্মেলনের মেজাজ যে স্তরে উঠেছে, তাতে শ্যামলালের মনেও সন্দেহ জাগছে যে, এত উঁচু সুরে বাঁধা শ্রোতার মনে কি দাগ ফেলতে পারবে লোকটা?
লোকটি কিন্তু নির্বিকার। একটা ফৌজিমার্কা কোট গায়ে, পাজামা পরে বসে আছে শিল্পীদের জন্যে নির্দিষ্ট স্থানে। বড় বড় ওস্তাদেরা আসছেন তাঁদের শিষ্যসম্প্রদায়কে নিয়ে। কর্মকর্তারা ব্যস্ত হয়ে উঠছেন তাঁদের আদর আপ্যায়নে। এদিকে এ লোকটিও যে আমন্ত্রিত শিল্পী, একেও যে আদর-যত্ন করা দরকার সেটা ভুলে গেছেন কর্মকর্তারা। তা হোক, কিন্তু লোকটার নামটা ডাকে না কেন? এখানে বসে থাকাই কি ওর সার হবে শেষতক? এ সম্মেলনে কি তার আসরে ওঠার সৌভাগ্যই হবে না?
অবশেষে ঘোষক বোধ হয় শিল্পী-তালিকায় তার নামে এসে পৌঁছেলেন। অপরিচিত নাম, একটু থমকে গেলেন ঘোষক। এসব কী কান্ড! এই সময় কিনা এমন এক অখ্যাত শিল্পী! হবে হয়ত কোন কর্মকর্তার পেয়ারের কেউ, কিছু টাকা পাইয়ে দেবার জন্যে নাম ঢুকিয়ে দিয়েছেন। কেন রে বাপু? দিতেই যদি হয়, তবে ভিক্ষে দিলেই তো হয়। এসব করে জমাট আসর ভঙ্গ করার কী অর্থঃ ঘোষক আর চিন্তা না করে নামটা ঘোষণা করে দিলেন। ঘোষণা শেষ হতে বেঢপ পোশাক-পরা সেই লোকটা মঞ্চে উঠে এল। ঘোষক এতক্ষণ একে কোন ওস্তাদের চাকর-বাকর ভেবেছিলেন। এবার অবাক হয়ে বললেন, তুমিই বাজাবে নাকি!
লোকটি ঘাড় নুইয়ে দরবারী কায়দায় সেলাম করে বললে, জি।
ঘোষক উপেক্ষার ভঙ্গী করলেন। লোকটি গিয়ে বসল আসরে।
তবলচি দর্শন সিং এসে বসলেন।
এদিকে দর্শকরাও বাদককে দেখে থ। ছ্যা, ছ্যা! এ কে উঠল? ওস্তাদের চেয়ে যে তবলচিও অনেক সুদর্শন। তাঁরা ভাবলেন, যাক্ গে। এই ভেড়ুয়ার বাজনা চলুক। ততক্ষণে আমরা বরং বাইরে গিয়ে চা-টা ধ্বংস করে আসি। এই ভেবে উঠে দাঁড়ালেন দর্শকবৃন্দ।
লোকটি চেয়ে চেয়ে দেখল সব। উপেক্ষা, চারদিকেই উপেক্ষা! বেশ, এই উপেক্ষাকেই জয় করব আমি। চোখ বুজে বুঝি গুরুপদ স্মরণ করল লোকটা। তানপুরার সুর বেঁধে নিল। তরপর শুরু করল সরোদ বাদন।
চমকে উঠলেন প্রস্থানোদ্যত দর্শকেরা। বাঃ মিঠে হাত তো! বাইরে যাওয়া হল না, আবার চেয়ারে এসে বসলেন তাঁরা।
লোকটার প্রথম দফায় জয় হল। লোকটা মাথা নুইয়ে সেলাম জানাল দর্শকদের।
এর পর পুরিয়া রাগে বিলম্বিত আলাপ চলল প্রায় আধ ঘণ্টা। দর্শকেরা তন্ময়। কিন্তু এখনও শিল্পীর চরম পরীক্ষা হয়নি। আসুক ঝালায়, দেখা যাক তার কবজির জোর, তালের ঠেকা।
একসময় বাদক পুনর্বার সেলাম জানিয়ে পদার্পণ করল ঝালায়। আহা! আহা! কী বাজনা! শ্রোতাদের বুকের ভিতরে সুর-সমদ্রের উত্তাল ঢেউ যেন আছড়ে পড়ছে। ঢেউগুলো যেন ক্রমেই উদ্দাম হয়ে উঠছে প্রমত্ত পবনে।
না, শেষ পর্যন্ত ওর সঙ্গে আর তাল রাখতে পারলেন না তবলচি দর্শন সিং। বেদম হয়ে পরাজয় বরণ করে সরে পড়লেন তিনি। এলেন নূতন তবলচি। প্রায় চার ঘণ্টা একটানা বাজিয়ে থামল নূতন শিল্পী। দর্শক তখন স্তব্ধ, ভাষাহারা। ঘোষকের চোখে তীব্র বিস্ময়।
স্তব্ধ মনীন্দ্র নন্দীও। জীবনে কম বাদন শোনে নি তিনি। কিন্তু আজ এ কী শুনলেন। না, সুরের মায়ায় মণ্ডপের কোন প্রদীপ জ্বলে ওঠে নি, শুরু হয়নি বারিপাত। কিন্তু অন্তরে অন্তরে ও কোন্ আলোর স্পন্দন, কিসের রিনিরিনি বারিপাত? শ্যামলালের হাত চেপে ধরলেন তিনি, বললেন, আপনি খাঁটি জহুরী। খাঁটি জহর খুঁজে বের করেছেন। কী যেন নাম ঘোষণা হল এঁর?
শ্যামলাল বললেন, আলাউদ্দিন খাঁ।
নন্দীমশাই বললেন, দেখবেন, এ বিশ্ব জয় করবেই।
* * * * *
সত্যিই বিশ্বজয় করেছিলেন আলাউদ্দিন। সারা পৃথিবীর প্রায় সব দেশে বাজনা শুনিয়ে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে এসেছিলেন তিনি। রবীন্দ্রনাথের আহ্বানে শান্তিনিকেতনে করেছিলেন অধ্যাপনা। তাঁর পুত্র,পুত্রী, নাতি এবং শিষ্যের দল আজও বিশ্বময় তাঁর সাধনার ধন প্রচার করে ফিরছেন। রবিশঙ্কর, তিমিরবরণ, পান্নালাল ঘোষ, আয়েত আলি খাঁ, আলি আকবর খাঁ, অন্নপূর্ণা দেবী, বাহাদুর খাঁ, নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়, আরো কত নাম বলব! আধুনিক ভারতের সব খ্যাত বাদন শিল্পীরাই তাঁর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ছাত্র। গুরুমুখী যে বিদ্যা কয়েক শত বছর পারিবারিক ধন হয়ে গোপন ছিল, এই মানুষটি তা এনে বিলিয়ে দিয়েছেন গোটা জাতির মধ্যে, গোটা পৃথিবীর সামনে। অথচ কপর্দকহীন এক গেঁয়ো বাঙাল হিসাবে তাঁর যাত্রা শুরু। এত বড় প্রতিষ্ঠার শিখরে উঠেছিলেন তিনি আপন নিষ্ঠায়, আপন একাগ্রতায়।
আমরা সাধারণ মানুষ তাঁর কাছ থেকে গানের সুর শিখতে না পারি, কিন্তু প্রাণের সুর শিখে নিতে দ্বিধা কোথায়? এস, তাঁর জীবন খুঁজে সেই সুরের সন্ধান করি।
শুরু হোক সেই নিষ্করুণ সাধনার ইতিহাস।
দুই
ইতিহাসেরও একটু ইতিহাস আছে। আলাউদ্দিন খাঁকে বুঝতে গেলে ওঁর বংশকেও একটু বুঝতে হবে। বংশটাই বিচিত্র। কয়েক পুরুষ ধরেই তারা খাপছাড়া। কী যে আছে তাদের মনের মধ্যে, তা তারাই জানে। কিসের যেন যন্ত্রণা, কিসের যেন আকাঙ্খা। তার জ্বালায় যেন ছটফট করে বেড়ায় ওরা। কী যেন পেলে তবে শান্ত হবে, কিন্তু পাওনাটা কী?
আলাউদ্দিনের ছ পুরুষ আগে ছিলেন দীননাথ দেবশর্মা- খাঁটি ব্রাহ্মণ! পুরোদস্তুর গৃহস্থ। কিন্তু পাগল, একেবারেই পাগল। বিয়ের পর বৌ-ছেলে নিয়েও পাগল হয়ে উঠলেন। বৌয়ের হল আকস্মিক মৃত্যু। দিশেহারা হয়ে পড়লেন দীননাথ। কদিন না খেয়ে, না নেয়ে পড়ে রইলেন। তারপর একরাতে ছেলের হাত ধরে বেরিয়ে পড়লেন অজানার উদ্দেশ্যে।
চলতে চলতে দীননাথ বাংলা ছাড়িয়ে, আসাম ছাড়িয়ে একেবারে কুকীদের রাজ্যে গিয়ে পৌঁছলেন। কুকীরা সেদিন আজকের কুকী নয়। তারা তখন একেবারেই অসভ্য, অচেনা! মানুষ দেখলেই তীর মারে। মানুষ মেরে তার মুন্ডু কেটে নিয়ে ঝুলিয়ে রাখে নিজের কুঁড়ের সামনে। যার বাড়িতে যতগুলো মুন্ডু, সে তত বড় বীর। নরমাংস খায় তারা। বুড়ো বাপ-মা মারা গেলে তাদের মাংস খাওয়া পূণ্য কাজ। ওদের বিশ্বাসঃ একদিন যাদের পেটে ছিলাম আমরা, আজ তারাই আমাদের পেটে থাক। সেই কুকীদের রাজ্যে পৌঁছলেন দীননাথ। সেখানে এক ভাঙা মন্দির আবিষ্কার করে সেখানে করালবদনা কালিকামূর্তির হোমার্চনা শুরু করলেন।
কুকীদের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎটা হল বিচিত্রভাবে। একদিন কুকীরা বিস্মিত হয়ে দেখলে,উলঙ্গ বীভৎস দেবীটার ভাঙা মন্দির থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। ওরা চমকে উঠল। তবে নিশ্চয়ই দেবী জেগেছেন। নিশ্চয়ই পাপ ঘটেছে। হায় হায়, কিসে হবে সমাজরক্ষা! ওরা আকুল স্বরে কাঁদতে কাঁদতে গিয়ে পৌঁছল মন্দিরে। উপুড় হয়ে পড়ল সাষ্টাঙ্গে, মা গো রক্ষা কর।
ওরা তখনও জানে না ওদের জন্যে কত বড় বিস্ময় অপেক্ষা করছে। ওদের চীৎকারে দেবী নন, দেবীর পুরোহিত রক্তবস্ত্রধারী দীননাথ বেরিয়ে এলেন। দীর্ঘ পদযাত্রায় প্রলম্বিত দাড়ি তাঁর, মাথায় জটা। স্তম্ভিত এবং প্রণত করবার মতো ভঙ্গী তাঁর। দীননাথ কুকীদের ভাষা জানেন না। হয়ত দেবমন্ত্রই উচ্চারণ করলেন তিনি। কুকীরা আন্দাজে বুঝে নিল, ওটা দৈববাণী, দেবতার ভাষা। তাহলে দেবী রুষ্ট হন নি। খুশি হয়ে স্বর্গ থেকে পাঠিয়েছেন সেবাইত। কুকীরা ছুটে গিয়ে নিয়ে এল দুধ, ফল। নিয়ে এল আহার্য। দীননাথ একই সঙ্গে তাদের পুরোহিত আর নেতা হয়ে সেই নির্জনে বাস করতে থাকলেন।
আর তাঁর পুত্র?
পুত্রও বড় হয়ে উঠতে লাগল। কুকীরা তার সঙ্গী, পিতা শিক্ষক। দীননাথের কাছে সে শেখে পুঁথিপাঠ, জানে শাস্ত্র, নানা টোটকা ওষুধ, আর কুকীদের কাছে শেখে তীর ধনুকের ব্যবহার, অরণ্যের ভাষা। দেখতে দেখতে দীননাথের পুত্রও হয়ে উঠল তাদের আর এক দুর্জয় নেতা। অরণ্যভূমিতে তাদের অখণ্ড আধিপত্য। এই সময়েই দীননাথ গত হলেন। পুত্র হলেন সবদিক থেকে তাদের অবিসংবাদী নেতা।
দীননাথ-পুত্র হয়ত কুকীদের মাঝে সেই অরণ্য-জীবনেই তাঁর দিনগুলো কাটিয়ে দিতে পারতেন, কিন্তু পরিস্থিতি তা হতে দিল না। এল সতের শ ছিয়াত্তর সাল। দেশ জুড়ে দূর্ভিক্ষ। দুই-তৃতীয়াংশ লোক গেল অনাহারে মরে। ইংরেজদের সেই নিঃসীম অত্যাচারে বাংলা দেশে বিদ্রোহী হল সন্ন্যাসীর দল, ইংরেজরা যার নাম দিলেন ‘সন্ন্যাসী বিদ্রোহ’।
দীননাথ-পুত্র কুকী-বাহিনী নিয়ে যোগ দিলেন এই বিদ্রোহে। তখন কুকী-বিদ্রোহের নায়ক ছিলেন রতন পুঁইয়া। ১৭৬২ সাল থেকে ইংরেজরা রতন পুঁইয়াকে শান্ত রাখবার জন্যে বারবার তার সঙ্গে সন্ধি করেছে, আর সুযোগ পেলেই আক্রমণ চালিয়েছে। উত্তেজিত কুকীরা ১৭৭৯ সালে চাংশীলবাজার লুঠ করল। বাজারের বণিক মহাজনেরা কাছাড়ে পালিয়ে গেল। ১৭৮৩ সালে তারা আক্রমণ করল টেপাই মুখের কুকীবাজার। ১৭৮৮ সালে ইংরেজ সেনাপতি লেফটেনান্ট স্টুয়ার্ট কুকী-অধ্যুসিত অঞ্চল জরীপ করতে এলে কুকীরা তাঁর বাহিনী এবং তাঁকে একেবারে ধ্বংস করে ফেলল। দুবছর পরে সেনাপতি ক্যাপ্টেন ব্রাউন এসেও নিহত হলেন। এবার ইংরেজরা তাদের সমস্ত শক্তি দিয়ে কুকীদের মোকাবিলা করতে এলেন।
এসব অভিযানের ঠিক কোন্-কোনটিতে দীননাথ-পুত্র অংশগ্রহণ করেছিলেন তার সঠিক নথি না পাওয়া গেলেও তিনি যে ইংরেজদের কাছে বিভীষিকার বস্তু হয়ে উঠেছিলেন, তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। তাই, বিদ্রোহীদের পরাজয়ের সঙ্গে দীননাথ-পুত্রকে ধ্বংস করা ইংরেজদের অন্যতম লক্ষ্য হয়ে উঠল। আর দীননাথ-পুত্রও একের পর এক সংগ্রামে হেরে গভীর থেকে গভীরতর অরণ্যে আশ্রয় নিতে থাকলেন।
এমনি সময় এক যুদ্ধে আহত হলেন দীননাথ-পুত্র। সঙ্গীরা পালাতে পালাতেও দলনেতার দেহ কাঁধে করে নিয়ে চলল। কিছুদূর গিয়ে তারা যখন বুঝল, নেতা মৃত, তাঁর দেহ পথপ্রান্তে ফেলে গেল তারা।
নেতা কিন্তু মরেন নি। কদিন তন্দ্রায় কাটিয়ে যেদিন তিনি চোখ মেললেন, সেদিন বুঝতে পারলেন না তিনি কোথায়! কী যেন একটা মিঠে সুর কানে আসছে তাঁর, অনেকটা মায়ের ঘুম পাড়ানী গানের মতো। তেমনি যেন গায়ে মাথায় হাত বোলানো-- সব অস্বস্তি মুছে নেবার প্রয়াস।
ধীরে ধীরে একসময় চেতনা ফিরে এল তাঁর। তিনি দেখলেন একটি শান্ত স্নিগ্ধ মেয়ে তাঁর সেবা করছে। মাঝে মাঝে সুর করে পড়ছে কী একটা বই। লম্বা সাদা দাড়িওয়ালা এক ফকির মাঝে মাঝে এসে খোঁজ নিচ্ছেন।
কারা এরা? এখানে তিনি এলেনই বা কী ভাবে? সুস্থ হয়ে সবই শুনলেন দীননাথ-পুত্র। এই বৃদ্ধ এক মুসলমান ফকির। মেয়েটি তাঁরই বিধবা কন্যা নয়তন। আহত মানুষ দেখে ফকির বয়ে আনেন তাঁকে। ইংরেজরা অনেকবার খোঁজ করেছে। কিন্তু মানী লোক দেখে ফকিরের বাড়ি আর খোঁজ করে নি। কোরাণ পাঠ করে আর সেবা দিয়ে নয়তনই বাঁচিয়ে তুলেছে তাঁকে।
মেয়েটির প্রতি কৃতজ্ঞতায় অশ্রুসজল হয়ে ওঠেন দীননাথ-পুত্র। বৃদ্ধকে বলেন, আপনাদের ঋণ ভুলবার নয়। আপনারা আমার প্রাণদাতা। কিন্তু কত দিন আর বসে বসে আপনাদের অন্নধ্বংস করব? এবার আমায় বিদায় দিন।
বৃদ্ধ বলেন, কোথায় যাবে? বিদ্রোহীরা পরাজিত। চারিদিকে ইংরেজরা তোমায় হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে। তার থেকে আমার এখানেই থেকে যাও।
দীননাথ-পুত্র ভাবলেন। তারপর বললেন, তা নাহয় থাকলাম। কিন্তু কী সুবাদে?
বৃদ্ধ বললেন, সুবাদ যদি চাও, দিতে পারি। আমার নয়তন বাল্য-বিধবা। আমি ওর বিয়ে দিতে চাই। যদি তুমি ওকে বিয়ে কর!......
দীননাথ-পুত্র বললেন, কিন্তু আপনি যে মুসলমান, আমি যে হিন্দু।
বৃদ্ধ বললেন, না, আমরা দুজনেই মানুষ।
দীননাথ-পুত্র বৃদ্ধের জবাবে বুঝি বা বেদ, কোরাণ আর সব ধর্মগ্রন্থের সার শুনতে পেলেন। মেনে নিলেন বৃদ্ধের কথা। থেকে গেলেন সেখানে। বিবাহ করলেন নয়তনকে। পাঠ করতে লাগলেন কোরাণ। তাঁর নূতন নাম সিরাজউদ্দিন, সংক্ষেপে সিরাজু। কিন্তু দীননাথ -- প্রতিষ্ঠিত কালীমূর্তিটি আনিয়ে তাকেই গৃহদেবতা হিসাবে প্রতিষ্ঠা করলেন তিনি।
কোরাণ-পাঠ আর কালীপূজা দু-ই চলতে থাকল।
* * * *
কিন্তু শান্ত জীবনযাত্রা বুঝি সিরাজুর জীবনে লেখেন নি বিধাতা। তাই নয়তনের কোল জুড়ে ছেলে এলেও শান্ত গৃহস্থ হতে পারলেন না সিরাজু। জমিদার-মহাজনের অত্যাচারে জর্জরিত মানুষ যখন দীর্ঘশ্বাস ফেলে আর আকাশের দিকে হাত তুলে দোয়া মাঙে, তখন সিরাজুর বুকের ভেতর কেমন করতে থাকে। এ অত্যাচার কি বন্ধ করা যায় না? যদি বন্ধ নাই করা যায়, তবে অন্ততঃ এর প্রতিবাদও কি জানানো যায় না? নিষ্ফল আক্রোশে গুমরে মরেন সিরাজউদ্দিন।
উপায় মেলে। একে একে সিরাজুর পাশে এসে সমবেত হয় আহত মানুষের দল। সিরাজু জানেন কেমন করে তপ্ত লোহায় আঘাত করে তরবারি তৈরি করা যায়। জানেন কোন্ গোপন শিক্ষায় এক একটা মানুষ পরিণত হয় এক-একটা ধারালো অস্ত্রে, তৈরী হয় সুশিক্ষিত এক বাহিনী। এবার প্রস্তুত সিরাজু। আসুক অত্যাচারের সংবাদ, অত্যাচারীর মুখোমুখি দাঁড়াবেন তিনি।
সংবাদ এল। সঙ্গে সঙ্গে জমিদারবাড়ি পত্র পাঠালেন সিরাজু। তুমি অমুক প্রজার এই সর্বনাশ করেছ। আজ সারাদিনের মধ্যে তার প্রতিকার যদি না কর, সূর্যাস্তের পর, সিরাজ যাবে ন্যায়ের বিধান নিয়ে। সাবধান!
দু-এক জমিদারবাড়ি উপস্থিত হতেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল জমিদার-মহাজনদের ভিতর। তাঁরা তাড়াতাড়ি গিয়ে উপস্থিত হলেন ইংরেজ প্রভুদের কাছে। হুলিয়া বেরোল সিরাজু ডাকাতের নামে।
হলে কী হবে। সিরাজুর ক্ষতি করবে কে? হাজার হাজার মানুষ, যারা অত্যাচারের ভয়ে কেঁপে মরত দিন-রাত, তারা যে অভয় পেয়েছে সিরাজুর কাছে! অতএব তারাই সিরাজুর অভয় মন্ত্র, তারাই সিরাজুকে রক্ষা করে চলল। অত্যাচার কিছু কমলেও একেবারে থামল না। সংবাদ এল, ইংরেজরা যাকে বলে সিলেট, সেই শ্রীহট্ট অঞ্চলের এক জমিদার অন্নপ্রাশনের নামে প্রজাদের ওপর এক বাড়তি কর চাপিয়ে জবরদস্তি আদায় করছে। না দিলে ঘর জ্বালানো, কয়েদ, শ্যামচাঁদ সব কিছুরই প্রয়োগ চলছে। সিরাজুর সাকরেদরা সংবাদের সত্যতা যাচাই করতে ছুটল। কদিন পর ফিরে এসে তারা জানাল, সংবাদ সত্য। সিরাজু পাঠালেন পত্র। সন্ধ্যায় পত্রবাহক এসে উপস্থিত হল জমিদারবাবুর বাড়ি। তার হাঁক-ডাকে বেরিয়ে এলেন নায়েবমশাই। কিন্তু নায়েবের হাতে তো পত্র দেবার হুকুম নেই। কাজেই নায়েব আলো ধরে পথ দেখিয়ে নিয়ে চললেন জমিদার-বাবুর কাছে। তাঁর হাতে পত্র দিতেই তিনি তা নায়েবের হাতে ফিরিয়ে দিয়ে বললেন, পড় তো।
পড়তে গিয়ে গা কেঁপে উঠল নায়েবের। পত্রের সারমর্ম বর্ণনা করতে গিয়ে তাঁর কণ্ঠ দিয়ে সপ্ত সুর নির্গত হল। অনেক কষ্টে তিনি বলতে পারলেন, আজ রাতে সিরাজউদ্দিনবাবু আসছেন।
কে সিরাজউদ্দিনবাবু? জমিদারবাবু শুধালেন।
হোহো করে হেসে উঠল পত্রবাহক। বললে, সিরাজউদ্দিনবাবুকে চেনেন না? তিনি আপনাদের পেয়ারের সিরাজু ডাকাত!
শুনেই জামদারবাবু উঠে দাঁড়াতে গেলেন। পত্রবাহক তাঁকে ধরে বসিয়ে দিয়ে বললে, ব্যস্ত হবেন না। সবে সন্ধ্যে। তিনি দুপুররাতের আগে আসবেন না। আপনি অনায়াসে পারবেন তাঁর অভ্যর্থনার ভালো আয়োজন করতে। সাবধান! আয়োজন যেন ভালো হয়।
বলেই সেলাম করে বেরিয়ে গেল পত্রবাহক।
জমিদারবাবু তাকে আর একবার দেখবার সুযোগ পেলেন না।
সেদিনই গভীর রাতে সিরাজু যখন দলবল নিয়ে এসে হাঁক ছাড়লেন জমিদারবাড়ির সদর দরজায়, তখন গোটা বাড়ি অন্ধকার, কোথাও প্রাণের সাড়া নেই। কী ব্যাপার? কেউ নেই না কি? না কি কোন ফাঁদ পাতা হয়েছে? একটু পরখ করে নিলেন সিরাজু। নাঃ ডরফুক্! একেবারে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। সবার আগে কাছারিতে প্রবেশ করলেন সিরাজু। যা দলিল দস্তাবেজ পেলেন. পুড়িয়ে দিলেন। ঘুরলেন ঘরে ঘরে। তামা, পেতল, কাঁসা, দামী কাপড় সংগ্রহ হল। বাধা এল না কোনখান থেকে। সত্যি, কেউ নেই কোথাও।
একসময় দোতলার সবচেয়ে বড় ঘরে এসে উপস্থিত হলেন সিরাজু। ও কী! বিছানায় কী যেন নড়ে! মশাল উঁচিয়ে ধরে দেখেন, একটা ছোট্ট শিশু। কাঁথাখানা টান মেরে সরিয়ে নিতে দেখা গেল, একটা মেয়ে। মাথা নোয়ালেন সিরাজু মেয়েটাকে ভালো করে দেখবার জন্য। অমনি একগাল হেসে একখানা ক্ষুদে হাত মুঠো করে বাড়িয়ে দিল সিরাজুর গাল স্পর্শ করতে। কী এক মমতায় বুকটা শিরশির করে উঠল সিরাজুর। দুহাত বাড়িয়ে মেয়েটাকে বুকে নিলেন তিনি। তারপর বিস্মিত সঙ্গীদের চোখের ওপর দিয়ে মেয়েটাকে বাড়ি নিয়ে এলেন সিরাজু।
এ কাকে নিয়ে এলে? নয়তন জিজ্ঞাসা করল।
সিরাজু হেসে বললেন, তোমার ব্যাটার বৌকে। আমি ওর সঙ্গে তোমার ব্যাটার বিয়ে দেব।
কথাটা বললেন বটে সিরাজ, কিন্তু তিনি জানেন, ডাকাতির বাড়ির মেয়ে এনে বড় করে ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া অসম্ভব। এ মেয়ের খোঁজেই একদিন পুলিশ এসে হাজির হবে, সর্বনাশ হবে তাঁর। তবে কী করবেন সিরাজু? ফেলে দেবেন মেয়েটাকে? মেরে ফেলবেন? না কি ফেরত দিয়ে আসবেন?
অবশেষে এল সেই রাত। বিছানায় উঠে বসলেন সিরাজু। পড়ে রইল বসতবাটি, পড়ে রইল সব। নয়তন, তাঁর ছেলে, কুড়োনো মেয়ে আর গৃহদেবতাকে নিয়ে নিরুদ্দেশ যাত্রা করলেন সিরাজু। নূতন দেশ, নূতন নাম, নূতন জীবন! পুরাতনকে মুছে ফেলবার আগ্রহে পা চালালেন সিরাজু।
এসে থামলেন ত্রিপুরা জেলার নদী-হাওরে ঘেরা এক গ্রামে, নাম শিবপুর। শিবপুরে সম্পূর্ণ ভিন্ন জীবন শুরু করলেন সিরাজু। বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত হল কালীমন্দির। কালীর পূজা আর কোরাণ-পাঠ দুই নিয়ে মেতে রইলেন এককালের ডাকাতসর্দার।
জমিদারের মেয়ে আর ডাকাতের ছেলে বেড়ে উঠতে লাগল একসঙ্গে।
তিন
শিবপুর গ্রামে সিরাজউদ্দিন যে বংশের পত্তন করলেন, সেখানে দু-তিন পুরুষ অবধি তাঁদের বিদ্রোহী উদ্দামতা যেন কিছুটা স্তিমিত হয়ে রইল। ক্ষেত-খামার, জমি-জিরেত, পুজো-আর্চা-এই নিয়ে কাটল তাঁদের। গ্রামের লোক সম্মানের চেখেই দেখল পরিবারটিকে।
সিরাজুর ছেলের ছোট ছেলে জাফর হোসেন। জাফরের ছেলে সফদর হুসেন খাঁ। গাঁয়ের লোকে আদর করে ডাকে সদন খাঁ বা সাধু খাঁ। যোগ্য নাম, সাধু খাঁই বটে। কারো সাতে-পাঁচে নেই, সংসারও দেখে না। নেশা বা পেশা যাই বল, সে হল সেতার। এই সেতার যে কেমন করে তাঁর হাতে এল, কে জানে! কিন্তু ঐ সেতারের পেছনেই কাটিয়ে দিলেন সারা জীবন।
কেউ না জানলেও সদু খাঁ নিজে জানেন কেমন করে তাঁর হাতে সেতার এল। আসলে বাজনা-পাগল লোক ছিলেন তিনি। নিজে না বাজালেও শুনতে ভালো লাগত তাঁর। একবার ত্রিপুরায় গিয়ে রাজদরবারে রবাব শুনবার সৌভাগ্য ঘটে সদু মিয়ার। বাজিয়ে ছিলেন দরবারের গায়ক ওস্তাদ কাশেম আলি খাঁ, সে বাজনা যেন কানে লেগে রয়েছে। তিনি নাকি মিয়া তানসেনের মেয়ের দিকের কেমন এক আত্মীয়।
অতএব সদু মিয়া অবসর পেলেই ছুটতে থাকলেন ত্রিপুরায়। সঙ্গে যেত ক্ষেতের সবচেয়ে ভালো চাল, বাড়ির-তৈরী টাটকা ঘি, মরসুমী ফল, বড় মুরগী, তৈরী খাসি। গায়কের ভেট, উপঢৌকন এসব।
বার বার পেতে পেতে একবার কাশেম আলি বললেন, তুমি আস কোথা থেকে?
সদ মিয়া বললেন, শিবপুর থেকে।
--এত দূর থেকে তুমি এত সব আন কেন?
অকপটে বললেন সদু মিয়া, আপনার রবাব বাজানো আমার বড় ভালো লাগে। বাড়ির সেরা জিনিসটি তাই আপনাকে না দিলে তৃপ্তি পাই না।
খাঁসাহেব বুঝলেন, যথার্থ সঙ্গীত-পাগল লোক সদু খাঁ। বললেন, তোমার আগ্রহ আছে। তুমি নিজে বাজনা শেখ না কেন? যদি শেখ, আমি তোমায় শেখাব।
এ কি প্রস্তাব করছেন খাঁসাহেব! আজ এই বৃদ্ধ বয়সে, অশক্ত দেহে এ শিক্ষা কি সম্ভব? সদু খাঁ কথা না বলে শুধু জরাজীর্ণ হাতদুটি বাড়িয়ে দিলেন।
খাঁসাহেব অর্থ বুঝলেন, সস্নেহে হাসলেন। বললেন, শিক্ষার বয়স নেই। তন্ময়তা থাকলেই শিক্ষা হয়। তুমি সেতার শেখ, আমি শেখাব।
এই অপ্রত্যাশিত সৌভাগ্যে হাতে সেতার তুলে নিলেন সদু খাঁ। তন্ময়তা তাঁর আছে, তবু কি বয়স বাধা নয়? সদু খাঁ বাজান, বাজনা শেখেন আর ভাবেন, আহা, যদি বয়স থাকত! অনেক ভেবেচিন্তে তিনি মেজো ছেলে আফতারউদ্দিনের হাতে সেতার তুলে দিলেন। দুই ওস্তাদ তাকে শিক্ষা দিতে থাকলেন -- রামকানাই শীল শেখাতে থাকলেন তবলা আর রামধন শীল সেতার।
সদু খাঁর স্ত্রী কিন্তু মনে মনে চটে গেলেন স্বামীর এই ব্যবহারে। নিজে তো গেছেনই, আবার ছেলেগুলোকেও! সারা জীবনে সংসারের ঝক্কি সামলালেন না, পুত্রদেরও কি অমন সংসার-বিমুখ করে দেবেন? একদিন বলেই ফেললেন তিনি, খবরদার, আপনি কিন্তু আর তৃতীয় ছেলে আলমের দিকে হাত দেবেন না।
সদু খাঁর নজর আলমের দিকে না ছিল এমন নয়। ছেলেটার মাথা মোটা হলে কী হবে চাল-চলন ভাব ভঙ্গী ভালো। মায়ের কোলে শুয়ে দুধ খেতে খেতে বাজনা শুনে কেমন মাথা দোলায়! ব্যাটা বাজনার কান নিয়ে জন্মেছে। কিন্তু স্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে সে ভাবনায় বিরত হলেন সদু খাঁ।
স্ত্রী ভুরু কুঁচকে বললেন, কী ভাবছেন? একেও নেবেন নাকি?
সদু খাঁ তাড়াতাড়ি বললেন, না না, তুমি আফতারকে দিয়েছ, তা-ই তো যথেষ্ট। আলম তোমারই থাক।
স্ত্রী বললেন, হ্যাঁ, আলমকে আমি লেখাপড়া শেখাব। বড় করব। ও হবে মস্ত পণ্ডিত, মস্ত কারবারী, মস্ত মহাজন।
সদু খাঁ হাসলেন। বললেন, বেশ তা তা-ই হবে। ছেলে বড় হলেই তো মা-বাবার গৌরব!
সেই গৌরব বাড়াতেই বয়স উপযুক্ত না হতেই আলমকে পাঠশালায় ভর্তি করে দেওয়া হল।
এই আলমই আলাউদ্দিন খাঁ। ১৮৬২ সালের কাছাকাছি কোন সময়ে তাঁর জন্ম হয় বলে অনুমান করা হয়।
পাঠশালা মোটেই ভালো লাগে না আলমের। বর্ণ পরিচয় হয়েছে তার। বাংলা বই মোটামুটি পড়তে পারে। হাতের লেখা সুশ্রী না হলেও লিখতেও শিখেছে আলম। তবু তার পড়াশুনা ভালো লাগে না। সে যে মাঠে মাঠে খেলে বেড়াতে চায়, তা নয়, সে যে খুব খেলে বেড়াতে ভালোবাসে, তাও নয়, বন্ধু-বান্ধব, দুষ্টুমি, বালক-সুলভ চপলতাও তার নেই, সে চায় দাদার মতো বাজনা শিখতে।
কিন্তু মায়ের কড়া শাসন। বাজনাটায় একদিন হাত দিয়েছে কি অমনি পিঠে পড়ল চ্যালাকাঠের বাড়ি। পড়তে পড়তে একটু থেমে দাদার বাজনা শুনতে কান পাতলেই ধমক। মায়ের কথার ওপরে এ সংসারে কথা বলবার অধিকার নেই কারো। তিনিই তো সংসারের হালটা ধরে রেখেছেন। তাঁর হিসেবী চোখের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতেই জুটছে মুখের অন্ন, দেহের বস্ত্র আর মাথার উপরে আশ্রয়। অতএব তাঁর শাসনে আলম নামে ক্ষুদে ছেলেটার বুকের ভিতরে কিসের ছায়া জমছে তা জানবে কে?
এক জানতে পারেন দিদি-- মধুমালতীদিদি। পাশের গাঁয়ে বিয়ে হয়েছে তাঁর। স্বচ্ছল পরিবার। আহ্লাদী বৌ। অতএব খুশিমতো আসেন বাপের বাড়ি। এই মাথামোটা বোকা-বোকা ভাইটার প্রতি তাঁর অসীম দরদ। কিন্তু তিনিও বলেন, ভালো করে লেখাপড়া কর্ আলম। দাদার মতো সেতারে হাত দিস না। পাঠশালার পড়া শেষ করে নে, তোকে বড় ইস্কুলে ভর্তি করে দেব। শহরে থাকবি।
এ-ই যাঁর মুখের কথা, কে তাঁকে জানাবে মনের ইচ্ছে! অন্ততঃ আলমের সাহস হয় না। বুকের কথা বুকেই চেপে রেখে আলম বই-পত্তর বগলে যায় পাঠশালায়। গুরুমশাইয়ের বেতের সামনে তার অন্তরাত্মা আরো শুকিয়ে ওঠে মাত্র। পড়াশুনা তেমন এগোয় না।
একাঁদন পাঠশালায় যাবার পথে থমকে দাঁড়াল আলম। কী সুন্দর প্রাণকাড়া সুর ভেসে আসছে না! কোথা থেকে? সুরের সন্ধানে ছুটল আলম। সুরের উৎসে এসে থমকে গেল। তার এত পরিচিত, এত সহজ জায়গায় রয়েছে তার স্বর্গ আর সে কি না নরকে মুখ গুঁজে পড়ে আছে!
এর পর থেকে বাড়ি থেকে পাঠশালার নামে বেরিয়ে নিত্য তার স্বর্গে এসে উপস্থিত হতে শুরু করল আলম। তাদেরই গাঁয়ের শিবমন্দির। এই শিব থেকেই তো গ্রামের নাম শিবপুর। ভক্তের চাইতেও সাধু-সন্ন্যাসীর ভিড় বেশি সেখানে! তাঁদের সিদ্ধি ঘোঁটা, ধুনি জ্বালানো, ধ্যান, শাস্ত্র-আলোচনা আর সেইসঙ্গে চলে নানারকম গান আর গান। আলম একটা মূহূর্তও নষ্ট করতে চায় না। কিন্তু বিকেল হলেই অন্য পড়ুয়াদের সঙ্গে বাড়ি ফিরতে হয়। নইলে মায়ের শাসনে যে এটুকুও হারাবে!
কিন্তু আলম খেয়াল করে নি যে, সদু মিয়ার ছেলে দিনের পর দিন পাঠশালা কামাই করতে থাকলে গুরুমশাই খোঁজ করবেনই। আর হলও তা-ই। সেদিন সবেমাত্র আলম বই-পত্তর নিয়ে বেরিয়েছে, পাঠশালায় যাওয়ার পথে গুরুমশাই এলেন তাদের বাড়ি। তার মাকে ডাকলেন। গুরুমশাই জানেন, ছেলের পড়া নিয়ে সদু মিয়াকে বলে লাভ নেই। অতএব সোজা আলমের মাকে বললেন, হ্যাঁগো আলমের মা, তুমি কি এ ছেলেটারও পড়াশুনা বন্ধ করে দিলে?
-- কেন? কেন? ভ্রু কুঁচকে সন্দেহবিদ্ধ প্রশ্ন তুললেন আলমের মা, সে তো রোজই পাঠশালায় যায়। আজও গেছে। পড়াশুনা বন্ধের কথা উঠছে কেন?
অভিজ্ঞ গুরুমশাই হাসলেন। বললেন, এ রোগেই তো ঘোড়া মরে আলমের মা! গাঁয়ের অধিকাংশ বাপ-মা ছেলে পাঠিয়েই খালাস, ছেলে সত্যি সত্যি পাঠশালায় যায় কিনা খোঁজও রাখে না। সেইজন্যেই তো আমাকে আবার বাড়ি-বাড়ি আসতে হয়।
মা বললেন, তবে কি আলম পাঠশালায় যায় না?
-- তবে আর বলছিটা কী তোমায়? খোঁজ নাও। দেখ, ছেলে কোন বদসঙ্গে মিশেছে।
দায় সেরে চলে গেলেন গুরুমশাই। আলমের মায়ের মেজাজ ততক্ষণে সপ্তমে চড়ে গেছে। সংসারতরীকে কি তিনি কিছুতেই নিজের ইচ্ছেমতো চালনা করতে পারবেন না? তার পালে কি উলটো হাওয়া লাগবেই? তাঁর যত আক্রোশ গিয়ে পড়ল সদু খাঁর ওপর। মানুষটা যদি একটু সংসারী হত! তিনি গর্জে উঠলেন -- বড় মিয়া। একবার শুনুন তো?
অপরাধীর মতো এসে দাঁড়লেন সদু মিয়া, কী বলছ বড় বৌ?
--আপনি কি কোন খোঁজই রাখবেন না? আমাকে কি পাঠশালাতে গিয়েও খোঁজ নিতে হবে ছেলের পড়াশুনার?
তড়বড়িয়ে উঠলেন সদু খাঁ, সে কী কথা! তোমাকে যেতে হবে কেন? আমি এখুনি যাচ্ছি।
বলেই পাঠশালার দিকে যাত্রার উদ্যোগ করলেন সদু মিয়াঁ।
দাঁড়ান! ডাকলেন আলমের মা, পাঠশালায় গিয়ে লাভ নেই। ছেলে পাঠশালার নাম করে বের হয়, কিন্তু যায় না পাঠশালায়। গাঁয়ে খুঁজে দেখুন সে শয়তান কোন আড্ডায় মিশেছে। যেখানে পান, তার কান ধরে হিড়হিড় করে টেনে আনুন। আজ তারই একদিন কি আমারই একদিন!
ছুটলেন সদু মিয়া। কোথায় থাকতে পারে ছেলে? তিনিই কি ছাই জানেন ছেলের মনের সন্ধান! কে তার বন্ধু কোথায় তার খেলার জায়গা? খানিক এলোমেলো দৌড়-ঝাঁপ করলেন সদু মিয়া, তারপর দূর ছাই, বলে সময় কাটাবার জন্যে চললেন শিবমন্দিরে। দেবতার স্থান, মহাত্মাদের আগমন ঘটে ওখানে। দুদণ্ড বসলেও মনটা শান্ত হয়, এইসব তুচ্ছতা থেকে অনেক উঁচুতে তোলা যায় মনটাকে। আর মনকে পার্থিব তুচ্ছতা থেকে না তুলতে পারলে রাগ-রাগিণীরা কি ধরা দিতে চান? সঙ্গীত-সাধনা কি সহজ কথা!
শিবমন্দিরের কাছাকাছি আসতেই মনটা খুশিতে ঝলমলিয়ে উঠল সদু খাঁর। খাসা ভরাট গলায় গান ভেসে আসছে, সেইসঙ্গে বাজছে দেশী তারের বাজনা আর তবলা। তবলার হাতটাও বেশ ভালো লোকটার। একটু দ্রুত পা চালালেন সদু মিয়া।
ভিতরে ঢুকে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন সদু মিয়া। এক সন্ন্যাসীর পাশে বসে বড় বড় মাথা দুলিয়ে তবলা বাজাচ্ছে তাঁরই ছেলে আলম। কান খাড়া করে শুনলেন সদু খাঁ। না, তাল ঠিক, মিঠে বোল উঠছে। পাকা হাত। কিন্তু শিখল কবে? কে শেখাল? ওস্তাদের কাছে শিখেও আফতারের হাত তো এত শুদ্ধ, এত মিঠে হয় নি! তবে কি ছেলে তাঁর শ্রুতিধর? বুকের ভেতরটা কেমন করে উঠল তাঁর! এ কে এসে জন্মেছে তাঁর ঘরে? গর্বে ভরে উঠল মন। একবুক আনন্দ নিয়ে ছুটলেন তিনি বাড়ির দিকে।
বাড়িতে পৌঁছোবার আগে থাকতেই সদু মিয়া চীৎকার করে ডাকলেন, বড় বৌ! বড় বৌ! ছুটে এলেন আলমের মা। অন্য প্রতিবেশীরাও কৌতুহলী হয়ে কান পাতলেন। খুশিতে বিগলিত সদু খাঁ বললেন, আলমের কাণ্ড তুমি শুনলে আশ্চর্য হবে বড় বৌ। এক ক্ষণজন্মা ছেলে এসেছে তোমার কোলে। ওকে অনাদর কোরো না।
এসব কথা শুনে হয়ত খুশি হলেন আলমের মা, কিন্তু সদু খাঁ যখন সবিস্তারে আলমের প্রকৃত কৃতিত্বের ব্যাখ্যা করলেন, তখন গুম হয়ে গেলেন তিনি। মুখে কোন কথা বললেন না। তাঁর মুখের একটি পেশিও নড়ল না। কিন্তু মনে মনে তিনি এক দুর্জয় প্রতিজ্ঞা করে দিনের কাজে হাত লাগালেন। সদু খাঁ ভাবলেন, স্ত্রী বুঝি বা খুশিই হয়েছে।
বিকালে ভালোমানুষের মতোই বাড়ি ফিরল আলম।
উঠোনে পা দিতেই তার হাত চেপে ধরলেন মা, কোথায় গিয়েছিলি?
মায়ের চোখের দিকে তাকিয়েই আলম বুঝল, সে যে পাঠশালায় যায় নি, একথা প্রকাশ হয়ে গেছে। আর মিথ্যে বলতে সাহস হল না তার। সে মায়ের চোখ থেকে চোখ নামিয়ে বলল, শিবতলায়।
-- কেন?
-- গান শুনতে।
-- গান শুনতে? ছুটে গেলেন মা। তারপর উঠোনের এককোণে স্তুপীকৃত চ্যালা কাঠের পাহাড় থেকে একটা তুলে নিয়ে বেদম মারতে থাকলেন আলমকে, দেখি তোর মগজ থেকে গানের ভূত তাড়ানো যায় কিনা!
মারতে মারতে মা-ই ক্লান্ত হয়ে পড়লেন একসময়। আলমের মুখ দিয়ে একটা শব্দও বের হল না। ছেলেটার নির্যাতন দেখতে দেখতে সদু খাঁর বুক ফেটে যেতে লাগল। ওর পিঠে পড়া প্রতিটি আঘাত যেন সদু খাঁর নিজের পিঠে পড়ছে। চোখ বুজলেন তিনি।
এদিকে আলমের মা তাকে টানতে টানতে গোয়ালঘরে নিয়ে গিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলেন। বললেন, থাক্ ওখানে, তোর খাওয়াও বন্ধ। দেখি না খেয়ে তোর গানের ভূত কত দিন থাকে?
দরজা বন্ধ করে দিলেন আলমের মা।
চোখ খুললেন সদু খাঁ। দেখলেন, ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে ভাইয়ের নির্যাতন দেখে মুখখানা করুণ করে দাঁড়িয়ে আছে আফতার। ফুঁপিয়ে কাঁদছে আলমের ছোট দু-ভাই নায়েব আর আয়েত। সারাদিন খায়নি ছেলেটা। মার তো হলই, খাওয়াও বন্ধ! নিজের অক্ষমতার জ্বালায় নিজেকেই ছোবলাতে ইচ্ছে হচ্ছে সদু খাঁর। কিন্তু ছেলেটার কী হবে?
ঠিক সময়ে তাঁর মনে পড়ল মধুমালতীর কথা। ধীর পায়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে পড়লেন তিনি। একমাত্র মধুমালতীই পারে ছেলেটাকে রক্ষা করতে।
* * * *
যেন নেহাৎই বেড়াতে এসেছেন এমনভাবে বাড়ি ঢুকলেন মধুমালতী। কুশল সংবাদ জিজ্ঞাসা করতে গিয়ে মাকে বললেন, কী হয়েছে মা? তোমার মুখ এমন গম্ভীর কেন?
সহানুভূতির ছোঁয়াচ পেয়ে দুর্জয়প্রতাপ আলমের মা হু-হু করে কেঁদে উঠলেন। তাঁর মনের সব আশঙ্কার কথা জানিয়ে বললেন, মধুমালতী রে, আমার সংসারটা কি একেবারেই ভেসে যাবে!
সব শুনে গম্ভীর মুখেই উঠে গিয়ে ভাইকে বের করে আনলেন মধুমালতী। খাওয়ালেন। তারপর বিছানায় ঘুম পাড়িয়ে রেখে বাবার সঙ্গে বাড়ি ফিরলেন।
চিন্তা কোরো না মা। আল্লার ওপর বিশ্বাস রেখো। তুমি তো কোন অন্যায় কর নি, আল্লা তোমার ভালো করবেনই। শুধু মনে রেখো, কোথায় কীভাবে মঙ্গল আসে তা কেউ বলতে পারে না।
সদু মিয়া সবিস্ময়ে তাকালেন মেয়ের দিকে। ঠিক কথা বলেছে মধু-মা। কিন্তু এত বড় কথাটা ওর মাথায় এল কী করে?
পরদিন ঘুম থেকেই উঠেই চমকে উঠলেন আলমের মা। আলমের বিছানা খালি। তবে কি বাইরে গেছে? যায় না তো কোন দিন! অপেক্ষা করলেন। ফেরার সময় অতিক্রান্ত হতে ব্যস্ত হলেন। ডাকলেন সকলকে। খোঁজাখুজি শুরু হল, গ্রামের পরিচিত গণ্ডি ছাড়িয়ে আশপাশের গ্রাম, মধুমালতীর বাড়ি, নাঃ, কোথাও নেই!
কেঁদে ফেললেন আলমের মা। ভয়কাতুরে হাবাগোবা মাথামোটা ছেলেটা কি রাতারাতি হাওয়ায় মিলিয়ে গেল! তোমরা কেউ কি দিতে পারবে না তার সন্ধান? ঈশ্বর কি শেষে আমার এই মঙ্গল করলেন!
পরবর্তী পর্ব পড়তে ক্লিক করুন
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment