Showing posts with label অনুবাদ সাহিত্য. Show all posts
Showing posts with label অনুবাদ সাহিত্য. Show all posts

একটি সবুজ দরজা


লেখক: ও হেনরি

সত্যিকারের দুঃসাহসী মানুষ তো খুব বেশি হন না। যে ধরণের মানুষের কথা পুঁথিতে লেখা হয় তারা অধিকাংশই ব্যবসায়ী মানুষ, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হিসেবী। সত্যিকারের দুঃসাহসী মানুষেরা ছুটে বেড়ায় উদ্দেশ্যবিহীন পথে, অজ্ঞাত ভাগ্যের সন্ধানে। তার একটি সুন্দর দৃষ্টান্ত হচ্ছে বাইবেলের “বেহিসেবী ছেলেটি"-- যখন সে যাত্রা করেছিল বাড়ি ফেরার পথে।

রাত দশটার সময় নিউইয়র্কের ব্রডওয়ে দিয়ে হাঁটছিল রুডলফ্ স্টেনার। রুডলফ্ সেই সত্যিকারের দুঃসাহসিক মানুষদের মধ্যে একজন যারা প্রতি সন্ধ্যায় ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ে অভাবিত ও উৎকট কিছুর সন্ধানে। পথের ঠিক একটা মোড়ের পরেই কি রহস্য লুকিয়ে আছে সেটাকে জানাই তার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। নিয়তির সন্ধানে পথ চলতে গিয়ে অদ্ভুত সব জায়গায় সে এর আগেও গেছে। এমনকি দু-রাত পুলিশের হাজতেও কাটিয়েছে সে। বহুবার ঠকবাজদের পাল্লায়ও পড়েছে। টাকা পয়সাও খুইয়েছে অনেক। কিন্তু নতুনকে জানার এই আগ্রহে সে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত ঘুরে বেড়ায়। দিনের বেলায় এক পিয়ানোর দোকানে বিক্রেতার চাকরি করা আমাদের দুঃসাহসী যুবকটি বেশ খোশ মেজাজেই ছিল।

হাঁটতে হাঁটতেই সে এক দাঁতের ডাক্তারের দোকানের দিকে তাকাল। উজ্জ্বল বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলা দোকানটিতে সামনেই বসানো ছিল একটা শোকেস। শোকেসের মধ্যে দাঁতের কড়মড় আওয়াজ হচ্ছিল। দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল এক বিশালাকায় নিগ্রো, যার কাজ-করা লাল কোট, হলুদ ট্রাউজার ও সামরিক টুপির সাজে আকৃষ্ট হচ্ছিল পথচারীরা। আগ্রহীদের সে একটি করে কার্ড বিলি করছিল। দাঁতের ডাক্তারদের এরকমভাবে কার্ড বিলি করার প্রথা রুডলফ্ বহু দেখেছে। রুডলফ্ অন্যান্য দিনের মতোই ওই নিগ্রোটির পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় এমন কৌশলের সাথে মানুষটি একটা কার্ড তার হাতে গুঁজে দিল যে সে একটু হেসে কার্ডটি হাতে নিল।

আরও কিছুক্ষণ হেঁটে যাওয়ার পরই তার দৃষ্টি কার্ডটার ওপর পড়ল। অন্যমনষ্কভাবে কার্ডটাকে দেখতে গিয়ে সে দেখতে পেল, কার্ডটার একদিক ফাঁকা ও একদিকে লেখা আছে “একটি সবুজ দরজা”। কৌতুহলী হয়ে রুডলফ্ স্টেনার আশেপাশে পড়ে থাকা আরও কয়েকটি কার্ড তুলে দেখল তার কার্ড ছাড়া প্রতিটি কার্ডেই দাঁতের ডাক্তারের বিজ্ঞাপন ছাপা আছে। কোনও দুঃসাহসিক কাজে নামতে রুডলফ্ স্টেনারকে দুবার বলতে হয় না, এবারও তার ব্যতিক্রম হল না। রুডলফ্ স্টেনার হেঁটে ডাক্তারখানার কাছেই আবার ফিরে এল। বিশালাকার আফ্রিকানটি হেসে হেসে কার্ড বিলি করছে, এবারও সে রুডলফ্ কে দেখে তার মাথাটা সম্মানসূচকভাবে হেলালো, কিন্তু কোনও কার্ড তাকে দিল না। কালো মানুষটি প্রতি আধমিনিট অন্তর অন্তর একটা দুর্বোধ্য বাক্য মন্ত্রের মতো আওড়াচ্ছিল ও রুডল্‌ফের মনে হল হাসা সত্ত্বেও তার চোখ দিয়ে বেরিয়ে আসছে তাচ্ছিল্যভরা শীতল ঠান্ডাদৃষ্টি।

ওর দৃষ্টিটা যেন রুডলফ্ কে হুল ফোটাল। সেই দৃষ্টির মধ্যে সে যেন পড়তে পারল নিজের যোগ্যতা সম্বন্ধে লোকটার মনের একটা নীরব অভিযোগ। কার্ডে লেখা রহস্যময় শব্দের অর্থ যাই হোক কালো মানুষটা তাকেই কার্ড পাওয়ার উপযুক্ত বলে বেছে নিয়েছিল। আর এখন রুডল্‌ফের মনে হচ্ছে সে যেন বলতে চাইছে এই হেঁয়ালিটা বোঝার কোনও সাধ্যই তার নেই।

কিন্তু রুডলফ্ স্টেনার দুঃসাহসী। সে ভিড় থেকে একপাশে সরে এসে বাড়িটাকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখল। অতিদ্রুত বাড়িটা সম্বন্ধে একটা ধারণা করে নেওয়ার সাথে সাথেই তার মনে হতে লাগল, এই বাড়িটার কোথাও কার্ডের রহস্যটা লুকিয়ে আছে।

বাড়িটা পাঁচতলা উঁচু। নিচে সিঁড়ির কাছে একটা রেস্টুরেন্টও রয়েছে। বন্ধ একতলাটাকে প্রথমেই সন্দেহের বাইরে রাখল সে। দোতলাটা পুরোপুরি দাঁতের ডাক্তারের দখলে। তার ওপরে নানান ভাষার জগাখিচুড়ি বিজ্ঞাপন দেখলেই বোঝা যায় সেখানে ভিড় করে আছে বাজনদার, গণৎকার ও ডাক্তারের দল। আরও উঁচুতে জানালার গোবরাটে রাখা সাদা বোতলগুলোই বলে দিচ্ছে সেগুলি ঘরসংসারের এলাকা।

বাড়িটা দেখা শেষ হলে রুডল্ফ স্টেনার পাথরের উচু সিঁড়িতে দ্রুত পা ফেলে বাড়িতে ঢুকে গেল। কার্পেট ঢাকা সিঁড়ির আরও দুটো ধাপ পেরিয়ে সিঁড়ির মাথায় একটু থামল। হল-ঘরে যাওয়ার পথে দুটো গ্যাসের বাতি টিমটিম করে জ্বলছিল, একটা তার ডানদিকে কিছুটা দূরে, অন্যটা আরও কাছে বাঁদিকে। কাছের আলোটার দিকে তাকিয়ে তার আভায় সে দেখতে পেল একটা সবুজ দরজা। এগোবে কিনা ভাবতে গিয়ে তার চোখে ভেসে উঠল আফ্রিকান লোকটির তাচ্ছিল্যভরা হাসিমুখটা। সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল রুডলফ্। সোজা সবুজ দরজাটায় গিয়ে ঘা দিল।

ভিতর থেকে কোনও জবাব আসার আগে রুডলফের মনে সিনেমাস্কোপের মত ভেসে যেতে থাকল পরপর ছবি। ভিতরে তাসারুরা জুয়া কেলতে পারে, ধূর্ত বদমাশেরা সুকৌশলে ফাঁদ ফেলতে পারে, কোনও সাহসিকা সুন্দরীর প্রেমের খেলা চলতে পারে, বিপদ, মৃত্যু, প্রেম, হতাশা, পরিহাস -- ইত্যাদি নিয়ে ভাবতে ভাবতেই, ক্যাঁ.....চ, দরজা খুলে গেল।

দরজাটা ধীরে ধীরে খুলতে রুডলফ্ যেন প্রথমে কিছু দেখতে পাচ্ছিল না। একটা মেয়ে, বিশ বছরেরও কম বয়স হবে, দরজাটা ধরে দাঁড়িয়ে আছে। না, না, দাঁড়িয়ে আছে না, দরজাটার হাতলটায় ভর করে একটু একটু দুলছে। মুখটা সাদা হয়ে গেছে। মেয়েটি সামনের দিকে পড়ে যাবার উপক্রম করতেই রুডলফ্ তাকে দুহাতে ধরে নিয়ে ঘরের ভেতরের একমাত্র বিবর্ণ কোচটায় শুইয়ে দিল। দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে সে দ্রুত চোখে একবার গ্যাসবাতির আলোয় ঘরটার চারদিকে চোখ বুলিয়ে নিল। ঘরটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কিন্তু তার সর্বাঙ্গে চরম দারিদ্রের ছাপ স্পষ্ট।

রুডল্‌ফের মনোযোগ আবার মেয়েটির দিকে পড়ল। কোচে মেয়েটি নিঝুম হয়ে পড়ে আছে, বুঝিবা মূর্চ্ছা গেছে। রুডলফ্ উত্তেজিতভাবে ঘরের মধ্যে একটা পিপে খুঁজল। পিপেতে চেপে ধরে মেয়েটিকে ঘোরালে হয়তো কোনও উপকার....... না না, সে তো জলে ডোবা লোকেদের জন্য। নিজের টুপি দিয়ে মেয়েটিকে হাওয়া করতে গিয়ে টুপিটা মেয়েটার নাকে লাগাতে সে চোখ খুলল। তার দিকে চেয়ে যুবকটি যেন দেখতে পেল সেই মুখখানির ছবি, যাকে সে এতদিন ধরে খুঁজছে। সরল, ধূসর দুটি চোখ, ছোট টিকালো নাক, একঢাল বাদামী চুল-- এতদিনে যুবকটির সব খোঁজার যেন অবসান হল। কিন্তু মুখখানি বড়ই বিবর্ণ, বড়ই শীর্ণ।

শান্ত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে মেয়েটি হাসল।

দুর্বল গলায় বলল -- আমি মূর্চ্ছা গিয়েছিলাম, না? তাতে আমার কি দোষ বলুন? আপনিও যদি তিনটে দিন না খেয়ে কাটান, তাহলে বুঝতে পারবেন।

-- হিমেল! লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়াল রুডলফ্ স্টেনার। -- আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা কর।

এক ধাক্কায় দরজাটা খুলে সে সবেগে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে থাকল। বিশ মিনিটের মধ্যেই ফিরে এসে সে দরজায় আবার এক ধাক্কা দিল। মেয়েটি উঠে এসে দরজাটা খুলে দিল। দুই হাতে ভরে একরাশ খাবারদাবার নিয়ে যুবকটি ঘরে ঢুকল। টেবিলে খাবারগুলি সাজিয়ে রাখল সে -- রুটি ও মাখন, ঠান্ডা মাংস, কেক, মটরশুঁটি, চাটনি, ঝিনুক, মুরগির রোস্ট, এক বোতল দুধ, আর এক বোতল গরম চা।

গর্জন করে বলল রুডলফ্ স্টেনার, -- না খেয়ে থাকাটা একটা হাস্যকর ব্যাপার। এ অভ্যাস তোমাকে ছাড়তেই হবে। খাবার প্রস্তুত। হাত ধরে মেয়েটিকে টেবিলের পাশে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে বলল, -- চা টা ঢেলে নেওয়ার জন্য একটা কাপ আছে কি?

-- জানলার পাশেই আছে, মেয়েটি জবাবে বলল কাপ নিয়ে ফিরে আসতে আসতে রুডলফ্ দেখল মেয়েটি ততক্ষণে চাটনির মোড়ক খুলে একটা বড়সড় চাটনির টুকরো বের করে ফেলেছে। হেসে সে টুকরোটা তার হাত থেকে নিয়ে এক কাপ দুধ ঢেলে দিয়ে যুবকটি বলল, -- আগে এটা খাও। তারপর তোমাকে দেব চা আর একটা মুরগির ঠ্যাং। তারপর যদি সুস্থ থাক তাহলে চাটনি খেতে পাবে কাল। তবে এই মুহুর্তে যদি আমাকে অতিথি হওয়ার অনুমতি দাও তাহলে আমরা একসঙ্গেই নৈশভোজটা সারতে পারি।

চেয়ারটা এগিয়ে সে বসে পড়ল। পেটে চা পড়ায় মেয়েটির চোখ ইতিমধ্যেই বেশ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। মুখের রঙও কিছুটা ফিরে এসেছে। একটা ক্ষুধার্ত বন্য জন্তুর মতোই সে খাবার খেতে লাগল। মজার কথা হল, যুবকটির উপস্থিতি ও তার কাছ থেকে পাওয়া সাহায্যটাকে সে সহজভাবেই গ্রহণ করেছে। তা বলে সে যে সাহায্যটাকে কম বলে মনে করছে তা নয়। আসলে যুবকটির আচরণ তাকে ভরসা যোগাচ্ছে। কিছুক্ষণ পরে মেয়েটি তার স্বাভাবিকতা ফিরে পেয়ে রুডলফকে তার জীবনের কাহিনীটা বলতে লাগল।

শহরের আর দশটা কর্মরতা মেয়ের মতোই তার জীবন -- শহরের কোনও এক দোকানের অল্প মাইনের এক মেয়ে কর্মচারীর কথা। মালিকের মুনাফার বহর বড় করার জন্যে “জরিমানা"র কাঁচি চালিয়ে তার মাইনে স্বল্প থেকে স্বল্পতর হয়ে যাওয়া, তার ওপরে চিকিৎসা না হওয়ার কারণে লেগে থাকা অসুখবিসুখ, ফলে চাকরি থেকে ছাঁটাই, আশাভঙ্গের সেই বহুশ্রুত জীবনী। কাহিনীটা শুনে যুবকটির মনে হল সে কাহিনী যেন "ইলিয়াডের মতোই বড়" বা "জুনির প্রেমের পরীক্ষার" মতোই মর্মান্তিক।

-- এত ঝড় ঝাপটা তোমার ওপর দিয়ে গেছে ভাবতেও কষ্ট হয়,রুডলফ্ বলল।

-- বড় ভয়ঙ্কর সে সবদিন, মেয়েটি গম্ভীরভাবে বলল।

-- শহরে তোমার কোনও আত্মীয় বা বন্ধু নেই, যুবকটি জিজ্ঞাসা করল।

-- কেউ নেই।

-- আমিও এ পৃথিবীতে একদম একা, গভীর দীর্ঘশ্বাসের সঙ্গে কথাটা রুডল্‌ফের বুক থেকে বেরিয়ে এল।

-- শুনে ভাল লাগছে, মেয়েটি বলল। নিজের বঞ্চিত জীবনের কথা শুনে মেয়েটি যে অন্তর থেকে জবাব দিয়েছে তা শুনে যুবকটিরও ভাল লাগল। হঠাৎই মেয়েটির চোখের পাতা নেমে এল। --আমার ঘুম পাচ্ছে; আর কি যে ভাল লাগছে, মেয়েটি ছোট্ট হাই তুলে বলল।

রুডলফ্ উঠে দাঁড়িয়ে টুপিটা হাতে নিয়ে বলল, -- তাহলে আমি আসি। তুমিও ঘুমোও। আরাম পাবে।

রুডল্‌ফের বাড়ানো হাত ধরে মেয়েটি বলল, -- শুভরাত্রি। কিন্তু তার দুচোখে একটা প্রশ্ন এত করুণভাবে, এত সরবে ফুটে উঠল যে যুবকটি সে কথার জবাব না দিয়ে পারল না।

-- আরে, তুমি কেমন আছ তা দেখতে তো আমি কালই আসছি। এত সহজে তুমি আমার হাত থেকে নিস্তার পাবে না।

দরজার কাছে এসে মেয়েটি বলল, -- এত দরজা থাকতে তুমি আমার দরজায় কিভাবে ধাক্কা মারলে?

রুডলফ্ তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। কার্ডের কথাটা তার মনে পড়ে গেল, আর হঠাৎই তার মনে একটা ঈর্ষাকাতর যন্ত্রণা ফিরে এল। কার্ডটা যদি তার হাতে না এসে কোনও দুঃসাহসিক অন্য কারও হাতে পড়ত তা হলে কি হত? সঙ্গে সঙ্গে সে স্থির করে ফেলল যে আসল সত্যটা মেয়েটিকে কোনওদিনই জানানো হবে না।

মুখে সে বলল -- আমাদের পিয়ানোর এক সুরকার এই বাড়িটাতেই থাকে। আমি ভুল করে তোমার দরজাটায় ঘা দিয়েছিলাম।

মেয়েটি হাসল। সবুজ দরজাটা বন্ধ হওয়ার আগে এই দৃশ্যটাই রুডলফ্ স্টেনার দেখেছিল। সিঁড়ির মাথায় সে একবার থামল। কৌতুহলী দৃষ্টিতে সে চারদিকে তাকাল। সে অবাক হয়ে গেল। তারপর সমস্ত তলাটা সে চক্কর কেটে ঘুরে এল। ফিরে এসে একবার ওপর তলায় গেল, তারপর সিঁড়ি দিয়ে প্রত্যেক তলায় নেমে চারদিক দেখতে লাগল।



বাড়িটার প্রত্যেক তলার প্রতিটি দরজার রঙ সবুজ।

অবাক হয়ে ভাবতে ভাবতে সে রাস্তায় নেমে এল। অদ্ভুত পোশাক পরা নিগ্রোটা তখনও সেখানে দাঁড়িয়েছিল। নিজের কার্ডটা বাড়িয়ে সে তাকে জিজ্ঞেস করল, -- তুমি এই কার্ডটা আমাকে দিয়েছিলে কেন? এর মানেই বা কি?

নিগ্রো মানুষটা দাঁত বের করে হাসতে হাসতে বলল, ওই যে ওখানে দেখুন মশাই। কিন্তু আপনি তো একটু দেরি করে ফেলেছেন। প্রথম অংশটা তো এই শেষ হয়ে গেল।

তার আঙুল বরাবর লক্ষ্য করে যুবকটি দেখল, রাস্তার উল্টোদিকে একটা থিয়েটারের ফটকের মাথায় বিদ্যুতের উজ্জ্বল আলোয় দেখা যাচ্ছে একটা সাইনবোর্ড, “একটি সবুজ দরজা"।

নিগ্রোটি বলে চলছিল, -- সকলেই বলছে নাটকটা খুব ভাল হয়েছে। ওদের এজেন্ট আমাকে একটা ডলার দিয়ে বলল, আমি যেন ডাক্তারের সঙ্গে এই কার্ডটাও বিলি করি। ডাক্তারের একটা কার্ড কি আপনাকে দেব মশাই?

বাড়ির পথে চলতে চলতে রুডলফ্ একটা বিয়ার আর চুরুটের জন্য থামল। চুরুটটা ধরিয়ে কোটের বোতামটা এঁটে নিল, টুপিটাকে পিছনে ঠেলে দিল, তারপর মোড়ের ল্যাম্পপোস্টটাকেই যেন লক্ষ্য করে বলল, -- আর যাই হোক, ভাগ্যই আমাকে হাত ধরে ওর কাছে নিয়ে গিয়েছিল।

অনুবাদ: শুভব্রত ভট্টাচার্য

শেষ


ফ্রান্সিস

লেখক: গী দ্য মোপাঁসাঁ

ভাবানুবাদ: কিংশুক বন্দ্যোপাধ্যায়

পারীর উপকণ্ঠে যে মানসিক হাসপাতালটা রয়েছে, তার ডাক্তার আমার বন্ধু। প্রায়ই আমাকে যেতে বলে। কিন্তু সময় সুযোগ করে কিছুতেই যাওয়া আর হয়ে ওঠে না। ডাক্তার দেখা হলেই এ নিয়ে অনুযোগ করে। বলে, সুস্হ মানুষ নিয়েই তো লিখলে এতকাল। এসো না, আমার ওখানে। দেখবে মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষও কেমন চমৎকার তোমার গল্পের প্লট যোগাতে পারে।

শেষে আর অনুরোধ ঠেলতে পারলাম না। একদিন সকাল সকাল হাজির হলাম ওখানে!

ডাক্তার তো আমাকে দেখে মহা খুশি। খাইয়ে দাইয়ে আমাকে নিয়ে বেরলো হাসপাতাল ঘুরিয়ে দেখাতে।

সে এক বড় বিচিত্র জায়গা। রাস্তাঘাটে পাগলটাগল দু’একটা দেখেছি, কিন্তু একসঙ্গে এতরকম বিচিত্র পাগলের সমাবেশ! হলপ করে বলছি, আমি কেন, আমার উর্দ্ধতন চৌদ্দপুরুষের কেউ দেখেছেন কিনা সন্দেহ। কেউ হাসছে, কেউ কাঁদছে, কেউ পরিত্রাহি চেঁচাচ্ছে, কেউ বা আবার গালে হাত দিয়ে চুপচাপ বসে আছে।

এইসব দেখতে দেখতে চলেছি। হঠাৎ কানে এল - “আঃ, মানিক আমার, আয়।”

তাকিয়ে দেখি একটা লম্বা রোগা চেহারার লোক কথাগুলো বলে চলেছে। ডাক্তার নিচু গলায় বললে, ও হল ফ্রান্সিস। ওর পোষা কুকুরকে ডাকছে। বদ্ধ উন্মাদ।

আমি কৌতুহলী হই - মানে -

-- মানে, কোকোতি নামে ওর একটা মাদী কুকুর ছিল। সেটা মারা যাবার পরেই ওর মাথায় গোলমাল দেখা দেয়।

ইন্টারেস্টিং!

আমার কৌতূহল দেখে ডাক্তার হেসে ফেললো। - প্লট খুঁজছো? ঘটনাটা বলছি। দেখো গপ্পো হয়েও যেতে পারে।

ডাক্তার এরপর আমাকে ঘটনাটা বললো। সেটা যেমন চমকপ্রদ তেমনই করুণ। সেটাই আপনাদের সামনে নিজের ভাষায় তুলে দিলাম।

************

সীন নদীর ধারে যেসব পশ্‌ বাংলোগুলো দেখে আপনাদের চোখ জুড়িয়ে যায়, তারই একটাতে ফ্রান্সিস ছিল কোচোয়ান। সাদাসিধে গ্রাম্য সরল ছেলে। মনের মধ্যে কোনও প্যাঁচ নেই। মুখে সর্বদাই হাসি লেগে রয়েছে।

একদিন নদীর ধারে বেড়াতে গিয়েছে সে। ফুরফুরে হাওয়ায় প্রাণমন জুড়িয়ে যায়। সেই আরামে বসে থাকতে থাকতে কখন যে সন্ধ্যার অন্ধকার নেমে এসেছে, তা সে খেয়ালই করেনি। খেয়াল যখন হলো তখন সীনের দু’পারে আলোকমালা জ্বলতে শুরু করেছে।

ফ্রান্সিস তাড়াতাড়ি বাড়ির পথ ধরলো। মালকিন আবার আটটার পরে আজ বেরোবেন। সুতরাং একটু পা চালিয়ে যেতেই হবে তাকে।

কিছুদূর যাবার পরে ফ্রান্সিসের মনে হলো কেউ যেন তাকে অনুসরণ করছে। পেছন ফিরে দেখে অনুসরণকারী আর কেউ নয় - একটা কুকুর। কতকাল খেতে পায়নি কে জানে! পাঁজরাগুলো গোনা যাচ্ছে। ফ্রান্সিসকে দাঁড়াতে দেখে ওটা কাছে এগিয়ে এসে ল্যাজ নাড়তে লাগলো।

কুকুর-টুকুর ফ্রান্সিস খুব একটা পছন্দ করে না। তার ওপর আবার নেড়ীকুত্তা। “হ্যাট, হ্যাট” করে মারবার ভঙ্গিতে হাত তুললে সে।

কুকুরটা একটু পিছিয়ে গেলো। কিন্তু পালালো না। বরং ফ্রান্সিস হাঁটতে আরম্ভ করলে আবার সে তার পিছু নিলো।

এতো আচ্ছা আপদ! তাড়ালেও যায় না। ফ্রান্সিস সাত-পাঁচ না ভেবেই একটা ইটের টুকরো ছুঁড়ল কুকুরটার দিকে।

এবার একটু ভয় পেলো কুকুরটা। লাফ মেরে ইঁটটাকে এড়িয়ে গেলো। কিন্তু পালালো না। মিনিট কুড়ি এভাবে চললো।

ফ্রান্সিস ইঁট তোলে আর কুকুরটা পেছোয়। কিন্তু যেই ও হাঁটতে আরম্ভ করে আবার পিছু নেওয়া শুরু হয়।

কাঁহাতক আর নির্দয় হওয়া যায় একটা অসহায় জীবের প্রতি। ফ্রান্সিস পারলো না। শেষমেস “আঃ, তু তু” বলে ডেকেই ফেললো। কুকুরটা এই আমন্ত্রণ পেয়ে একটু চমকে গেল। কিন্তু সে চমকানো সাময়িক। তারপরই ল্যাজ নাড়তে নাড়তে ফ্রান্সিসের কাছে চলে এলো। মুখ ঘষতে লাগলো ওর জুতোয়। হাড় জিরজিরে শরীরটার ওপর হাত বোলাতে বোলাতে ফ্রান্সিস বলল, চল আমার সঙ্গে।

সোজা মালিকের বাড়িতে গিয়ে উঠল কুকুরটাকে নিয়ে। আস্তাবলে খড়কুটো দিয়ে তার থাকবার মতো একটা জায়গাও করে দিলো। রান্নাঘরে ছিল কিছু পোড়ারুটি। খেতে দিলো তাকে। কুকুরটা খেয়ে দেয়ে দিব্যি ঘুম লাগালো।

পরদিন সকালে মালিকের কানে গেলো খবরটা। মানুষ হিসেবে তিনি সত্যিই ভদ্রলোক। সঙ্গে সঙ্গে কুকুরটার থাকার অনুমতি মিলে গেলো।

ফ্রান্সিস তার নাম রাখলো কোকোতি। কুকুরটা হয়ে উঠলো তার প্রাণ। একটা গলাবন্ধনী কিনলে সে তার জন্য। গলায় পরিয়ে দিলে। সারাদিন কোকোতি তার পিছু পিছু ঘুরতো। লোকে আড়ালে হেসে বলতে শুরু করল -”মানিকজোড়”।

ভালো খাওয়া দাওয়া পেয়ে আস্তে আস্তে কোকোতির চেহারা খুলে গেলো। কোথায় গেলো সেই হাড় বার করা রোগা ডিগডিগে শরীর। দিনে দিনে সে দিব্যি মোটাসোটা নাদুসনুদুস হয়ে উঠলো।

কিন্তু এর পরেই শুরু হলো অন্য জ্বালাতন। এলাকার যত কুকুর ছিলো সবকটার সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতালো সে। বাড়িতে, রাস্তায় কুকুরে কুকুরে ছয়লাপ হয়ে গেল। কোকোতি যখন বেরোত একপাল কুকুর চলতো তার পিছু পিছু। সেও সম্রাজ্ঞীর মতো ঘাড় উঁচু করে স্টাইল মেরে রাস্তায় হাঁটতো। আর কুকুরের দল তার সঙ্গ পাবার জন্য নিজেদের মধ্যে কামড়াকামড়ি শুরু করে দিত।

এইরকম ভাবেই চলছিলো। কিন্তু দিনে দিনে কোকোতির বন্ধুবান্ধবদের অত্যাচারের মাত্রা বাড়ল বই কমল না। মালী আর রাঁধুনী প্রথমে কোকোতির প্রতি দয়াবশত মালিকের কাছে কিছুই বলেনি। কিন্তু তারাও তো মানুষ। সর্বক্ষণ এক পল্টন কুকুরের অত্যাচার কাঁহাতক সওয়া যায়।

শেষমেস একদিন বাধ্য হয়েই তারা নালিশ করলো। মালিক সব শুনে ডেকে পাঠালেন ফ্রান্সিসকে। পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন কোকোতির আর এই বাড়ীতে স্হান হবে না।

হুকুম শুনে বেচারা ফ্রান্সিস চেষ্টা করলে কোকোতিকে অন্য কাউকে দেওয়ার। কিন্তু কে নেবে তাকে! তার সঙ্গে যে একপাল কুকুরের অত্যাচারও সহ্য করতে হবে! সেজন্য সবাই মুখ ফেরালে।

ফ্রান্সিস তখন নিরুপায়। লে-পঁ তে ছেড়ে দিয়ে এলে কোকোতিকে।

কিন্তু সেই সন্ধ্যা বেলাতেই ল্যাজ নাড়তে নাড়তে ফিরে এলো কোকোতি।

এক রাঁধুনি হাডরে যাচ্ছিলো। পাঁচ ফ্রাঁ দিয়ে তাকে কোনমতে রাজী করানো হলো যাতে সে ট্রেনে করে তাকে নিয়ে গিয়ে হাডরেতে ছেড়ে দেয়।

কিন্তু ছাড়লে কী হবে? তিনদিনের মাথায় কোকোতি আবার ফিরে এলো। পথশ্রমে জিভ বেরিয়ে গেছে তার। মালিকের দয়া হল এবার। আপাতত ফাঁড়া কাটলো বটে কোকোতির কিন্তু ওর বন্ধুবান্ধবরা কি অত সহজে ছেড়ে দেবে ওকে না কোকোতিই ওদের ছেড়ে থাকতে পারে? দু-একদিন বোধহয় লজ্জা কাটাতে গেলো। তারপরই আবার কুকুরে কুকুরে বাড়ি ছয়লাপ। ওদের চিৎকার চেঁচামেচিতে বাড়িতে কানপাতা দায়।

মালিক এবার ভয়ঙ্কর রেগে গেলেন। ফ্রান্সিসকে ডেকে বলে দিলেন, হয় সে থাকবে নয়তো কোকোতি। দুজনকে আর একসঙ্গে পুষতে পারবেন না তিনি।

মনের দুঃখে প্রথমে ফ্রান্সিস ভাবলো এ বাড়ি ছেড়ে সে চলে যাবে। সেইমতো বাক্সপ্যাঁটরা গোছাতে লাগলে। কিন্তু তারপরই অন্য একটা চিন্তা মাথায় এলো তার। কোথায় যাবে সে? তিনকূলে তো তার কেউ নেই। মা-বাবা কবেই মরে গেছে। লেখাপড়াও তো কিছু শেখেনি যে এতবড় শহরে একটা চাকরি জোটাবে। তার ওপর তার মনিব তো খারাপ লোক নন। বরং এতকাল ধরে তাকে যথেষ্ট আদর-যত্নেই রেখেছেন। এখন তাঁকে সে ছেড়ে চলে যাবে নিছক একটা রাস্তার কুকুরের জন্য!

না, এটা সে করতে পারবে না। কখনোই না।

সারারাত দু’চোখের পাতা এক করতে পারল না ফ্রান্সিস। চিন্তাটা যেন তাকে কুরে কুরে খেতে লাগলো। চোখ বুজলেই মনের পর্দায় ভেসে উঠতে লাগলো কোকোতির করুণ মুখটা।

ভোর হয়ে এসেছে।

ফ্রান্সিস উঠে পড়লো। খুঁজে পেতে একটা শক্ত দড়ি বার করলে। তারপর চললো কোকোতির সন্ধানে।

কোকোতি ঘুমাচ্ছিল আস্তাবলেই। ফ্রান্সিসকে আসতে দেখেই ল্যাজ নাড়তে নাড়তে তার কাছে ছুটে এলো। দু পায়ের ওপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আদর করতে লাগালো তাকে। ফ্রান্সিসও কোকোতির ঘাড়ে, শরীরে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।

কতক্ষণ এভাবে কেটে গেছে তা ফ্রান্সিসের খেয়াল নেই। চমকটা ভাঙলো মোরগের ডাকে। তাইতো, সকাল হলো বলে, যা করবার এক্ষুণি করতে হবে।

-- চল আমার সঙ্গে।

বিনা দ্বিধায় কোকোতি লাফাতে লাফাতে চললো ফ্রান্সিসের সঙ্গে। ভাবলো সকাল সকাল বুঝি বেড়াতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাকে।

অত ভোরে পথঘাটে লোকজন কেউ নেই। সীনের ধারে যখন ফ্রান্সিস এসে পৌছল তখনও চারিদিক নিঃঝুম। জায়গাটা নদীর চেয়ে বেশ উঁচুতে। নিচে শান্ত সীন বয়ে চলেছে। আবছা কুয়াশা ঢেকে রেখেছে অপর পারের গাছপালাগুলোকে।

কোকোতির গলাবন্ধনীর সঙ্গে দড়িটার একপ্রান্ত বাঁধলে ফ্রান্সিস। অন্যপ্রান্ত বাঁধলে একটা ভারী পাথরের সঙ্গে। তারপর কোলে তুলে নিলে কোকোতিকে। কোকোতি কিন্তু এতটুকু সন্দেহ করেনি। বরং এতক্ষণ পরম কৌতূহলভরে মনিবের কাজকর্ম দেখছিলো। এখন যেই তাকে কোলে তোলা হল অমনি তাকে আদর করা হচ্ছে ভেবে গলা দিয়ে ঘড়ঘড় শব্দ করতে লাগলে সে।

ফ্রান্সিস এদিকে বিষম সমস্যায় পড়েছে। যতবারই সে কোকোতিকে ফেলতে যায় ততবারই তার এক মন তাকে বলে, “এ কী করছো ফ্রান্সিস? কোকোতিকে না তুমি ভালবাস? যাকে ভালবাস তাকে এমনভাবে ডুবিয়ে মারতে চাও?” অন্য মন এদিকে তাকে তিরস্কার করে। বলে, “কি করছো ফ্রান্সিস? অযথা দেরি করছো কেন? কী লাভ দেরি করে? অপ্রিয় কর্তব্য যত তাড়াতাড়ি সেরে ফেলা যায় ততই ভাল।”

বারবার দশবার কোকোতিকে ফেলতে গিয়েও ফেলতে পারলো না ফ্রান্সিস। এগারোবারের পর কী যেন হয়ে গেল হঠাৎ সে বুঝতে পারলো কোকোতি আর তার কোলে নেই। বহু নিচে বয়ে যাওয়া সীন নদীতে সে। ঘড়ঘড় শব্দ করে পাথরটাও ঝাঁপ দিল নদীর বুকে।

প্রথমে কোকোতি চেষ্টা করল সাঁতরাতে। এমন অনেকবার সে সীনে সাঁতার কেটেছে। কিন্তু আজ সে পারল না। ভারী পাথরটা তাকে টানতে লাগলো নদীগর্ভের দিকে। মনিবের দিকে করুণ নয়নে তাকালো সে। ফ্রান্সিসের মনে হলো ডুবে যেতে যেতে সেই করুণ চোখদুটো যেন তার বিশ্বাসঘাতকতার, তার নীচতার প্রতি এক নীরব ধিক্কার জানিয়ে গেল।

জলের ওপরে কয়েক মিনিট ধরে বুদ্বুদ উঠলো। তারপর সব শান্ত। সীন আবার শান্তভাবে বইতে শুরু করলো। এদিকে লাল হয়ে এলো পুবের আকাশ।

এই ঘটনার পরে ফ্রান্সিস যেন কেমন হয়ে গেলো। কোনকিছু খেতে চাইতো না। কারো সঙ্গে কোন কথাও বলতো না। শুধু সময় পেলেই চুপচাপ বসে থাকতো নদীর ধারে।

মালিক তার মনের অবস্হা বুঝতেন। তিনি ভাবলেন মাসকয়েকের জন্যে অন্য কোথাও গিয়ে থাকলে ফ্রান্সিসের ভালো হবে। তিনি তাই সপরিবারে তাঁর রোয়েনের বাগান বাড়িতে চলে এলেন।

এখানেও সীন বয়ে চলেছে বাড়িটির পাশ দিয়ে। সহিসের সঙ্গে আগে থেকেই বেশ ভাব ছিল ফ্রান্সিসের। এখানে তার সঙ্গেই রোজ নদীতে স্নান করতে যেতো সে। জলের বুকে অনেকক্ষণ দাপাদাপি করে তবে দু’জনে ফিরতো।

আস্তে আস্তে ভাল হয়ে আসছিল ফ্রান্সিস। মালিকও তাকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।

কিন্তু বিধি বাম। একটা ছোট্ট ঘটনা ফ্রান্সিসের সারা জীবনটাকে চুরমার করে দিলো। সেদিন ফ্রান্সিস সাঁতরাতে সাঁতরাতে প্রায় মাঝনদীতে চলে এসেছে। এমন সময় দেখতে পেলে একটা মরা জন্তুর দেহ ভাসতে ভাসতে তার দিকেই আসছে।

প্রথমে সে আদৌ মনোযোগ দেয়নি সেটার প্রতি। প্রতিদিনই তো কত মরা জীবজন্তু ভেসে আসে নদীর বুকে, এতে আর আশ্চর্যের কি আছে।

এটার ক্ষেত্রেও হয়তো তাই হতো। কিন্ত মৃতদেহটা একটা ছোট্ট ঢেউ-এর ধাক্কায় ফ্রান্সিসের কাছাকাছি চলে এলো। একটা কুকুরের মৃতদেহ। বেশ বড় কুকুর। বোধ হয় মাদী হবে। কিভাবে মরল......

হঠাৎ ফ্রান্সিস চমকে উঠল কুকুরটার গলাবন্ধনীর দিকে তাকিয়ে - যেন ইলেকট্রিক শক খেয়েছে। কেমন যেন চেনা চেনা লাগছে না ওটা। তবে কী......

কোনোরকমে গলাবন্ধনীটা খুলে নিয়ে জলের ওপরে তুললো সে। দুপুরের রৌদ্রোজ্জ্বল আলোকে স্পষ্ট দেখলে তাতে লেখা আছে -- ‘কোচোয়ান ফ্রান্সিসের আদরের কোকোতি।’

একটা অশরীরী চিৎকার বেরিয়ে এল ফ্রান্সিসের গলা দিয়ে। সমস্ত শক্তি দিয়ে সাঁতরে তীরে উঠল। তখন তার শরীরে পোশাক নেই। নগ্ন অবস্থাতেই দৌড়তে শুরু করল সে।

শেষ

ভেংকা

লেখক: আন্তন চেকভ

ভাবানুবাদ: দেবীদাস আচার্য

মস্কো শহরে ছোট্ট একটা জুতো তৈরির কারখানা রয়েছে আলেখিনের। বেশ কজন ছেলে-ছোকরাও কাজ করে। ন’বছরের ভেংকা, মানে ভেংকা জুখভও এই মাসতিনেক হল আছে সেখানে। অন্যদিন এতক্ষণে শুয়ে পড়ে ভেংকা। কিন্তু সেদিন তা করল না। পরদিন খ্রিস্টমাস। ভেংকা বসে বসে অপেক্ষা করতে লাগল। আলেখিন-তার স্ত্রী আর অন্যসব কর্মচারীরা গির্জায় চলে যেতেই চঞ্চল হয়ে উঠল সে। তাক থেকে কালির দোয়াত আর নিবে মরচে ধরে যাওয়া কলমটা পেড়ে নিল। জামার পকেট থেকে শত ভাঁজ করা একটা কাগজ বের করে মেলে ধরল সামনের টেবিলটার ওপর। হাত দিয়ে ঘষে ঘষে দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া কাগজটাকে সমান করার চেষ্টা করল কিছুটা। তারপর হাঁটু গেড়ে টেবিলটার সামনে বসে একেবারে ঘাড় গুঁজে লেখার জন্য তৈরি হল।

প্রথম অক্ষরটা লেখার আগেই দরজা আর জানলার দিকে সচকিতে তাকাল বারকয়। তাকের অন্ধকার কোণটাতে একটা মূর্তি বসান। তার দুপাশে মিস্ত্রীদের একগাদা যন্ত্রপাতি রাখা। ভেংকা সেদিকে স্হির তাকিয়ে- থাকে কিছুক্ষণ। হঠাৎ-নিজের অজান্তে একটা দীর্ঘশ্বাস পড়তেই নড়েচড়ে বসে লিখতে শুরু করে।

“প্রিয় দাদু,

তোমাকে একটা চিঠি লিখছি। আমার তো বাবা নেই। মাও নেই। আমার যা কিছু সব তুমিই। খ্রিস্টমাসের ভালবাসা জেনো। প্রার্থনা করি ভগবান যেন তোমাকে করুণা করেন”।

চিঠি থেকে মুখ তুলে জানলার দিকে আর একবার তাকাল ভেংকা। মোমের শিখার ছায়াটা নাচছে জানলার কাঁচে। সেদিকে একদৃষ্টে চেয়ে থেকে ভেংকার চোখের ওপর দাদুর ছায়া ছায়া একটা মূর্তি ভেসে ওঠে।

ভেংকার দাদু কনস্টানটাইন মাকারিখ। জিভারেভ নামে এক ধনীর বাড়িতে নাইটগার্ডের কাজ করে। বয়স-ষাটের কোঠায়। বেঁটে খাটো রোগারোগা চেহারা।তবে এখনও বেশ চটপটে আর প্রাণচঞ্চল। হাল্কা হাসি মুখে। চোখদুটো সারাক্ষণ মদের ঘোর লাগা। দিনের বেলায় সাধারণত ঘুমিয়ে থাকে পেছনদিকের রান্নাঘরটাতে। কিংবা হাসি মস্করা করে কাজের লোকেদের সঙ্গে। রাত্তির হলে চামড়ার কোটটা গায়ে চাপিয়ে হাতে একটা ডান্ডা নিয়ে ঠকঠক করতে সারা চত্বরটা ঘুরে ঘুরে বেড়ায়। আর কোটটা গায়ে চড়ালেই তার ওই বেজীর মত শরীরটা দেখে কাসতাংকা আর এল নামের কুকুরদুটো সসম্ভ্রমে চলতে থাকে পেছন পেছন।

ঠিক এক্ষুনি হয়ত দাদু এসে দাঁড়াল গেটের কাছটাতে। চার্চের জানলা দিয়ে যে জোরাল আলো এসে পড়েছে চত্বরটা চোখ সেদিকে একবার দেখে নিল। তারপরই পা-পেঁচিয়ে দাঁড়িয়ে চাকরবাকরদের সঙ্গে মস্করায় লেগে গেল। ডাণ্ডাটা ঝুলছে কোমরের বেল্ট থেকে। নিজের মনেই একটা ফিচেল হাসি হেসে কোটের পকেট থেকে নস্যির ডিবেটা বের করে রাঁধুনীর দিকে এগিয়ে ধরে বলল, চলবে নাকি এক টিপ?

মেয়ে মানুষটিও দিব্যি পুরো এক টিপ নস্যি নাকে টেনে নিয়ে হাঁচতে থাকল ঘনঘন। সঙ্গে সঙ্গে হেসে গড়িয়ে পড়ল দাদু, হাঃ হা, হাঃ হাঃ, ঠাণ্ডায় বন্ধ নাকের পক্ষে ভাল না?

হাসির দমকেই কুকুর দুটোর নাকেও নস্যি ভরে দেওয়া হল। কাসতাংকা হাঁচতে হাঁচতে বিরক্ত হয়ে হাঁটা দিল। এলের হাঁচতে ভালই লাগছে বোধ হয়। তাই লেজ নাড়ছে তৃপ্তিতে।

শান্ত প্রকৃতি। নিথর, নিস্তব্ধ। অন্ধকার রাত ঢেকে রেখেছে চারদিক। গ্রামের ভেতর সারিসারি বাড়িগুলো নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে। তাদের ছাদের ওপর সাদা বরফের চাদর পড়ে গেছে অনেকক্ষণ। চিমনিগুলো থেকে ধোঁয়া বেরিয়ে আসছে। প্রায় বরফ-ঢাকা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে গাছগুলো।

তাদের মাথার ওপর অজস্র তারা ছড়িয়ে আছে নিকষ কালো আকাশের গায়ে। ছায়াপথটাও কত স্পষ্ট। খ্রিস্টমাসের জন্য যেন সদ্য বানানো হল............

দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভেংকা! অন্যমনস্ক হাতেই কালির দোয়াতে ডুবিয়ে নিল নিবটা। লিখতে শুরু করে আবার!

“কালকের দিনটা তো একরকম লুকিয়েই কাটিয়েছি। কত্তা আমার চুলের মুঠি ধরে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে গেল উঠোনে। তারপর ঘোড়ার জিনের লম্বা বেল্টটা দিয়েই সপাসপ....। আমার দোষ কী? ওদের বাচ্চাটাকে শুইয়ে রেখে তার পিঠ চাপড়াতে চাপড়াতে ঘুম এসে গিয়েছিল আমার।

এই তো গত সপ্তাহেই একদিন গিন্নিমার সামনে বসে হেরিং মাছ কাটতে হচ্ছিল আমাকে। দোষের মধ্যে লেজের দিকটা কেটে ফেলেছি আগে। তা গিন্নি প্রায় ছুটে এসে মাছটা তুলে নিয়ে মুড়োটা ঘসে দিল আমার মুখে।

আর কারখানায় কাজ শেখে যে ছোকরাগুলো – আমি যেন তাদের হাসির খোরাক। এতেই ইতি হলে তাও বুঝতাম। কত্তার বাগান থেকে শসা চুরি করতে আমায় বাধ্য করে তারা। আর ধরা পড়লে আমার কপালে যা জোটে তা আর না-ই বললাম।

খাবার জোটে না বরাতে। সকালে রুটি মেলে। দুপুরে তাও না - মাড় খানিকটা। সেই রাত্তিরে গিয়ে আবার রুটি। চা না সবজির সুপ না - ওসবই গেলে তারা বসে বসে।

এত সবের পরেও যদি একটু ঘুমোতে পারতাম! যাতায়াতের পথেই শুতে হয় আমাকে। ওদের বাচ্চাটা কেঁদে উঠলেই, উঠে গিয়ে তার পিঠ চাপড়ে ঘুম পাড়াতে হয় আবার। আর সত্যি বলতে কি সারারাতে কতবার যে কেঁদে কেঁদে ওঠে বাচ্চাটা! দুচোখের পাতা এক করতে পারি না।

ঈশ্বরের দোহাই, দাদু, এখান থেকে নিয়ে চল আমাকে। গ্রামে আমাদের বাড়িতে নিয়ে চল। এখানে আর এক দণ্ডও সহ্য করতে পারছি না। ভগবানের কাছে তোমার জন্য অনেক প্রার্থনা করব আমি। দয়া করে নিয়ে চল আমায়। নইলে মারা যাব..............

ভেংকার ঠোঁটদুটো কেঁপে ওঠে। কালো মুঠি দিয়ে চোখ কচলাতে গিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না বেরিয়ে আসে।

-- তোমার জন্য নস্যি গুঁড়িয়ে রাখব --আবার লেখে সে। -- তোমার জন্য প্রার্থনা করব। যদি অবাধ্য হই কখনও, যা ইচ্ছে সাজা দিও - কিচ্ছুটি বলব না। কোন কাজ না থাকলে নায়েবমশাইকে বলব, যদি তাঁর জুতো সাফ করতে দেন আমায়। নইলে ফেদিয়ার বদলে আমিই না হয় ভেড়ার পাল চরাতে যাব। লক্ষ্মীটি দাদু, আর পারছি না। এরা আমাকে মেরেই ফেলবে।

কতবার ভেবেছি পালিয়ে যাব এখান থেকে। পায়ে হেঁটেই। কিন্তু আমার তো জুতো নেই। বরফের রাস্তায় জুতো ছাড়া চলতে বড় কষ্ট হয়।

যখন বড় হব, তোমার দেখাশুনো করব আমি। আঘাত দেব না কখনও। তুমি মারা গেলে তোমার আত্মার শান্তি কামনা করব, যেমনটি করি মায়ের জন্য।

মস্কো শহর তুমি তো জান। সারি সারি বাড়ি, কত গাড়ি ঘোড়া। রাস্তার কুকুরগুলোকে ভয় লাগে না। খ্রিস্টমাসের দিনে সব ছেলেরাই দলবেঁধে চার্চে যায় না গান গাইতে। একবার তাদের সবাইকে দেখেছিলাম বড়শির কাঁটা বিক্রি করতে। যে কোন মাছ ধরার ভাল কাঁটা তুমি পেয়ে যাবে ওদের কাছে। একটা দোকানে দেখলাম কত বন্দুক। আমার মালিকের যেমন আছে, ঠিক তেমনটি। কম করে একশ রুবল দাম হবে একেকটার। আর কসাইয়ের দোকানে বনমোরগ বা খরগোস কাটতে দেখি। জিজ্ঞেস করলেও বলে না কোত্থেকে শিকার করেছে ওগুলো।

বাড়িতে যখন খ্রিস্টমাস ট্রি আসবে তুমি একটা কিছু সরিয়ে রেখো আমার জন্য। মিস ওলগাকে বোলো ওটা ভেংকার জন্য।........

বুক ঠেলে আবার শ্বাস বেরিয়ে আসে। জানলার দিকে তাকায় ভেংকা। মনে পড়ে, দাদুর হাত ধরে সে খ্রিস্টমাস ট্রি আনতে চলেছে। আঃ, কী দিন ছিল সেসব। বনের পথে চলতে চলতে একসময় একটা ফার গাছের তলায় দাঁড়াত তারা। পকেট থেকে পাইপ বের করে ধরিয়ে নিত দাদু। বড় একটিপ নস্যির টান দিত নাকে। মুচকি হেসে দেখত পাশে দাঁড়িয়ে ছোট্ট ভেংকা হি হি করছে শীতে। হঠাৎ একটা খরগোস তীরবেগে ছটে যেত সামনে দিয়ে। চেঁচিয়ে উঠত দাদু, এই, ধর ধর ধর। যা পালাল।

অনেক কষ্টে খ্রিস্টমাস টি বাড়িতে পৌঁছলে তাকে সাজান শুরু হত। মিস ওলগাই সব থেকে ব্যস্ত সে কাজে। মিস ওলগাকে খুব ভাল লাগে ভেংকার | তখন তার মাও বেঁচে ছিল। কাজ করত ওই বাড়িতেই। মিস গুলগা কত কিছুই না দিত তাকে। মিষ্টি, কেক আরও কত কি। তাকে পড়তে শেখাত বসে বসে, পড়া, লেখা, গোনা......। তার কাছে একটু একটু করে নাচও শিখেছিল ভেংকা। মাটাও মারা গেল আর অনাথ ভেংকার জায়গা হল পেছন দিকের ওই রান্নাঘরটাতে। দাদুর সঙ্গেই। তারপর মস্কো.......তারপর..........

এই জুতোর কারখানায়...

-- লক্ষী দাদু আমার, আবার শুরু করে ভেংকা -- আমাকে নিয়ে যাও এখান থেকে। খ্রিস্টমাসে এই শুধু আমার প্রার্থনা। এই অনাথ বালককে একটু দয়া কর, দয়া কর। এরা কেউ একটুও দয়া দেখায় না কখনও। খাবার জোটে না কপালে। শুধু মার জোটে। আমি কাঁদতে থাকি সবসময়। জুতোর ফর্মা দিয়ে মালিক একদিন মারল এমন যে আমি আছাড় খেয়ে পড়লাম মাটিতে। মনে হল আর কখনও বুঝি উঠে দাঁড়াতে পারব না। কুকুরের চেয়েও শোচনীয় জীবন আমার।

কোচওয়ানকে আমার ভালবাসা জানিও। আর হ্যাঁ, আমার বাজনাটা যেন দিয়ে দিও না কাউকে। আমার বড় সখের জিনিস ওটা। তুমি আমার আদর নিও আর শিগগির এসো আমায় নিয়ে যেতে। এসো দাদু......!

ইতি

তোমার নাতি

ইভান জুখভ

সন্তর্পণে কাগজটা চার ভাঁজ করে একটা খামে ঢুকিয়ে নিল ভেংকা। এক কোপেক দিয়ে খামটা কিনে রেখেছিল আগের দিনই। এক মুহূর্ত চুপ করে কি যেন ভাবল বসে। তারপর নিবটা আর একবার কালিতে ডুবিয়ে নিয়ে লিখল “আমার দাদু৷ লিখে ঠিক সন্তুষ্ট হল না। মাথা চুলকোতে চুলকোতে আবার কী ভাবল বোধ হয়। লিখল:

“আমাদের গ্রামের কনস্টান্টাইন মাকারিখ”

এতক্ষণে চোখে মুখে একটা তৃপ্তির ঝিলিক দেখা গেল ভেংকার। চিঠি লেখাটা যে এত নির্বিঘ্নে হয়ে যাবে ভাবতেই পারেনি। মাথায় টুপির নিচে লুকিয়ে নিল চিঠিটা। তারপর একছুটে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। খেয়ালই করল নাযে ওই ঠাণ্ডায় ফিনফিনে একটা জামা শুধু গায়ে। বাইরে যেতে গেলে কোটটা গায়ে চাপানো দরকার।

চিঠিপত্রের ব্যাপারে আগের দিনই একটু খোঁজখবর নিয়েছিল সে কসাইয়ের দোকানের লোকগুলোর কাছে। তারাই বলছিল ডাকবাক্সে ফেলে দিতে হয় চিঠি। তারপর তিনটে ঘোড়ায় টানা গাড়িতে করে কোচওয়ানরা সে চিঠি নিয়ে যায় দূরে দূরে -- যার যেখানে যাওয়া দরকার। এসব জেনেই না চিঠি লেখার ভরসা পেয়েছিল ভেংকা।

ছুটতে ছুটতে এক্কেবারে ডাকবাক্সের সামনে এসে দাঁড়াল সে। চোখের মণি তার ওই চিঠিটা ফেলে দিল তার ভেতরে।

মনটা হাল্কা হয়ে গেল খুব। যেন কারও ওপর রাগ নেই আর, কোনও দুঃখ নেই। আশার দোলায় দোলায় ঘণ্টাখানেক বাদে গভীর ঘুম এসে জড়িয়ে ধরল তাকে...... ঘুমের মাঝে ভেসে এল এক আলোর স্বপ্ন। সে আগুনের সামনে বসে পা দোলাতে দোলাতে দাদু তার চিঠিটাই পড়ে শোনাচ্ছে চাকরবাকরদের..... পোষা কুকুর এলটাও যেন কী এক সুখের গন্ধ পেয়ে লেজ নেড়ে নেড়ে ঘুরছে সামনেটায়।

ভাবানুবাদ: দেবীদাস আচার্য