ভূতায়ন - অপারেশন বেলুন ফটাস (Bhutayan - Operatio Belun Fotas)


আমরা পড়তাম কলেজিয়েট স্কুলে। সেই সময়ে সেটা ছিল নদীয়া-কৃষ্ণনগরের সবচেয়ে নামকরা স্কুল। মহাত্মা মনমোহন ঘোষের দান করা বিরাট বাড়ি। হাই স্ট্রিটের উপর মিউনিসিপ্যালিটি অফিসের উল্টো দিকে। এখন অবশ্য রাস্তাটার নাম হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রোড। কিন্তু আমি যে সময়ের কথা বলছি-- সেই 1940 সালের, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তখনও জীবিত। তাই রাস্তার নাম তখন ছিল হাই স্ট্রিট। 
 
কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির বিরাট প্রাঙ্গণে সে আমলে বৈশাখ মাসে একটা বিখ্যাত মেলা বসত। নাম বারোদোলের মেলা। কৃষ্ণনগর মহারাজের আমন্ত্রণে ও ব্যবস্থাপনায় প্রায় এক পক্ষকালের জন্য দূর-দূর মন্দির থেকে দ্বাদশটি কৃষ্ণমূর্তিকে ঐ মেলায় নিয়ে আসা হত। তার মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ছিলেন -- মদনমোহন। ঐ দ্বাদশটি বিগ্রহকে ঘিরে বসত বিরাট একটা মেলা। মেলায় বসত অসংখ্য দোকান, -- দূর দূর পল্লী থেকে সংগৃহীত কুটিরশিল্প, -- খেলনা, খাগড়াই বাসন, শান্তিপুরের ধুতি-শাড়ি, মাদুর, পাখা, চাকি-বেলুন, বড়ি-আচার-আমসত্ত্ব, -- কী নয়! এছাড়া কৃষ্ণনগরের মৃৎশিল্পের মনমুগ্ধকর পাঁচ দশটি দোকান তো থাকতোই! তখনও কৃষ্ণনগর শহরে কোন পাকা বাইশকোপ-হল ছিল না। বাইশকোপ-হল বুঝলে তো? আমি সিনেমা হাউসের কথা বলছি! মেলাতেই তখন তাঁবু খাটিয়ে নানান জাতের সিনেমা দেখানো হত। চার্লি চ্যাপলিন, আর লরেল-হার্ডি তখন খুব জনপ্রিয়। যদিও অধিকাংশ চলচ্চিত্রই ছিল নির্বাক।

এছাড়া পড়ত সার্কাসের তাঁবু। বাঘ-সিংহ-হাতি-ঘোড়া-কুকুর আর জোকার। প্রচণ্ড ভিড় হত সার্কাসে। এ-ছাড়াও থাকত আজব তাঁবু, - - এক-মানুষের দুটো মাথা। মাকড়শা মানুষ। আরও কত কি!

জুয়ার তাঁবুও ছিল। তবে আমাদের সে-পাড়ায় যেতে দেওয়া হত না। 
 
কিছু তাঁবুকে আমরা আবার বলতাম -- এলেম তাঁবু। বন্দুক ছুঁড়ে বেলুন ফাটানো তোমরা নিশ্চয় দেখেছ। আমাদের আমলে সেটা ছিল অন্য ধরনের। এখন রথের মেলায়, গাজনের মেলায়, কলকাতা ময়দানের শিল্পমেলায়, আবার বারোয়ারি পূজা-প্যান্ডেলেও ঐ খেলার আয়োজন দেখি। একটা পিচবোর্ডে গাদাগাদি করে নানান রঙের বেলুন টাঙানো থাকে। একেবারে ঠাসাঠাসি বেলুনের ভিড়। পাঁচ হাত দূর থেকে বাচ্চারা বেলুন ফাটায়। দনাদ্দন বেলুন ফাটিয়েই তারা আনন্দ পায়। নেহাৎ ছুঁচোর মতো অন্ধ না হলে ভিড়ে-ঠাসা বেলুন মিস্ করাই কঠিন।

কিন্তু আমাদের বারোদোলের মেলায় ব্যবস্থাটা ছিল অন্যরকম। উত্তর ভারত থেকে একজন দোকানদার আসত ঐ বেলুনের দোকান নিয়ে। সেই বেলুনের দোকানে ভূতোদার কীর্তিকাহিনীটা এবার শোনাই।

ভূতোদা, আগেই বলেছি, অলরাউন্ড স্পোর্টসম্যান। এয়ারগান এও তার অদ্ভুত টিপ। দশবার ফায়ার করলে অন্তত ছয়বার বুলস-আইয়ের ভিতর হিট করবে। বাকি চারখানা কেন্দ্রের ছোট্ট চক্রের কানঘেঁষে বেরোবে। বারোদোলের মেলায় বেলুনের দোকানে ব্যবস্থাটা ছিল বিচিত্র। অসংখ্য বেলুন ঝুলছে, -- ছোট থেকে বড়, কাছে থেকে দূরে। প্রতিটি বেলুনের গায়ে একটা করে নম্বর। যে বেলুন যত কাছে, আকারে যত বড়, -- তার নম্বর তত কম। যে বেলুন যত দূরে আর মাপে যত ছোট, -- তার নম্বর তত বেশি। সব চেয়ে কম নম্বর হচ্ছে পাঁচ, আর সবচেয়ে দূরের অ্যাতোটুকু বেলুনটার নম্বর পাঁচ শো। ছররা গুলির দাম এক পয়সায় দুটো, অর্থাৎ টাকায় বত্রিশটা ছররা। পাঁচ-নম্বর বেলুনটা ফাটাতে পারলে দোকানদার দেবে পাঁচ দুগুনে দশ পয়সা, পাঁচশ নম্বর বেলুনটা ফাটাতে পারলে পাওয়া যাবে পাঁচশো দুগুনে হাজার পয়সা, অর্থাৎ দশ টাকা!


নগদে পাবে না কিন্তু! ঐ দোকানেই সাজানো আছে হরেকরকম মনোহারী সওদা। লজেন্সের কৌটো, বিস্কিটের টিন, নানান জাতের পুতুল, ক্রিকেট ব্যাট, টেনিস র‍্যাকেট, ফুটবল থেকে শুরু করে ক্যারাম বোর্ড, শৌখিন কাপডিশের সেট, মায় দেওয়াল-ঘড়ি। সে-আমলে রেস্তোরাঁয় গিয়ে পুরো আট আনার খাবার খাওয়া যেত না। সুতরাং দশ টাকায় চীনামাটির তেত্রিশ পীসের শৌখিন ডিনার সেট পাওয়া যেত।

আগেই বলেছি, ভূতোদা আমাদের লীডার। এখনও মনে আছে, ন্যাপলা যেদিন ক্লাসে বারোদোল মেলার ঐ বেলুন স্টলের গল্পটা প্রথম শোনালো, -- সেদিন ভূতোদা তো একেবারে আহ্লাদে আটখানা। বলে, চল আজ দলবেঁধে বারোদোলের মেলায় যাব। বেলুনের দোকানটা ফাঁকা করে দিয়ে আসতে হবে।

এ বিষয়ে আমাদের কোনও সন্দেহ নেই। ভূদ্দার একটা নিজস্ব এয়ারগান আছে। সেটা সে তার ভোম্বল মামার কাছ থেকে উপহার পেয়েছিল, উপনয়নের দিনে। সকালে ব্যায়াম সেরে প্রতিদিন সে নিয়ম করে গুণে গুণে পঁচিশটা ফায়ার করে। ইদানীং সে এয়ারগান ছুঁড়ে বাগানের পাকা আম পাড়ে। গুলি আমের গায়ে লাগে না, -- লাগে বোঁটায়! ভূতোদার ছোট বোন নেড়ি ধামা বাড়িয়ে ধরে। আমটা টুপ করে ধামায় পড়ে। মাটিতে পড়ে না। এ হেন লক্ষ্যভেদী অর্জুন আর অনেক আশা নিয়ে আমরা সদলবলে চললাম বারোদোলের মেলায়, -- ভূদ্দা, সুখেন, নেড়া, মন্টু, ন্যাপলা আর আমি। প্রত্যেকে চার আনা করে চাঁদা দিয়েছি। আমাদের মোট পুঁজি চার-ছয় চব্বিশ আনা; অর্থাৎ দেড় টাকা। তার মানে দেড় ইনটু বত্রিশ অর্থাৎ আটচল্লিশটা ছররা। আমরা নিশ্চিত যে ভূতোদা দোকানের সব কয়টা বেলুন ফটাস্ করে দেবে। তার মানে গুদাম-সাবাড়! ফেরার পথে বোধহয় একটা ঠেলাগাড়ি ভাড়া করতে হবে!

তিন-তিনটে সাইকেলে ডবল-ক্যারি করে আমরা ছয়জন যখন বারোদোলের মেলায় গিয়ে পৌঁছলাম তখন সন্ধ্যা হয়-হয়। সারা মেলায় তখন পেট্রোম্যাক্স, হ্যাজাক আর ডে-লাইট জ্বালার ধুম। তখনও শহর কৃষ্ণনগরে ইলেকট্রিক লাইটের লাইন পাতা হয়নি। মেলার প্রবেশ দ্বারে সাইকেল স্ট্যান্ডে সাইকেল জমা দিয়ে আমরা পাঁচ মস্তান গুরুজীর পিছন-পিছন বেলুন-তাঁবুর দিকে এগিয়ে চলি।
 
ঢুকতে যাব, -- সামনেই অযাত্রা। ক্লাসের ফার্স্ট বয়: গজেন।


ভূতোদা ক্ষেপচুরিয়াস হয়ে ওঠে। বলে, -- তুই এখানে কেন? গজেনও রুখে ওঠে, -- কেন? এমন তো কোন আইন নেই যে, সব সাবজেক্টে ফেল করতে না পারলে বারোদোলের মেলায় আসা যাবে না?

ভূতোদা জ্বলন্ত দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে দেখল শুধু। জবাব না দিয়ে তাঁবুর ভিতরে ঢুকে গেল। ন্যাপলা বলে, দিলি তো ভূদ্দার মেজাজটা বিগড়ে? এখন ও ক্রমাগত মিস্ করবে। মেজাজ খারাপ হলে টিপ কখনো ঠিক থাকে?

গজেন বলে, ও এমনিতেই মিস্ করতো। এখন বরং আমার ঘাড়ে দোষ চাপাবার একটা অজুহাত পাবে। সুখেন বলে, যাগগে মরুগগে ওসব ছেঁদো কথা! গজেন, তুই কি আমাদের দলে আসবি? চার-আনা চাঁদা দিয়ে? গজেন জানতে চায়, কিসের চাঁদা? ন্যাপলা আর ন্যাড়া ওকে ব্যাপারটা বুঝিয়ে দেয়, -- এই বেলুন-তাঁবুর যাবতীয় সওদা বাড়ি নিয়ে যাবার জন্য আমরা অপারেশন বেলুন-ফটাস্ স্কীম করেছি। শুনে গজেন তো হেসেই বাঁচে না! 
 
ওর সঙ্গে তর্কাতর্কি না করে আমরা পাঁচজন তাঁবুর ভিতর ঢুকে যাই। ভূতোদা ততক্ষণে লাইনে দাঁড়িয়েছে। 
 
বেলুন-তাঁবুতে লক্ষ্যভেদী অর্জুনদের ভিড়। কিউ দিয়ে দাঁড়িয়ে ছররার টিকিট কিনতে হয়। ভূতোদা লোকটাকে যখন দেড় টাকা দিতে চাইল তখন লোকটা রাজি হল না। দেহাতি হিন্দির সঙ্গে বাঙলা মিশিয়ে বলল – বাবুজি, এক সঙ্গে এক রূপিয়ার য্যাদা টিকস্ হামি দিতে পারি না। সোচিয়ে, সব কোইকো তো খুস্ করনা পড়েগা না? 
 
যুক্তিপূর্ণ কথা। ভূতোদার পিছনে যারা কিউতে দাঁড়িয়েছে তারা না হলে কী করবে? ফলে একটাকায় বত্রিশটা ছররা কিনে ভূতোদা বন্দুকটা নিয়ে দাঁড়ালো। আমাদের বললে, কী কী নিয়ে যাব পছন্দ করেছিস্? নেড়া বলল, প্রথম বত্রিশটায় তোমার স্কোর কত হয় দেখি। 
 
-- তবে তাই দ্যাখ। প্রথমে ফার্স্ট সেঞ্চুরিটা তো করি। তারপর যে কাণ্ড হল,
 
-- কী বলব, -- লিখতে গিয়ে এখনো আমার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছে। ঘটনাটা অবিশ্বাস্য! ভূতোদার নয়, ভূতের ভেলকি! 
 
ভূতোদা দনাদ্দন ফায়ার করছে আর ধড়াধ্বড় মিস্ করছে। আমাদের প্রত্যাশায় যে বল ওভার বাউন্ডারী হবার কথা তা একের পর এক জমছে উইকেট-কীপারের হাতে। প্রথম দশটা ফায়ারে স্কোর-শূন্য। বিশ্বাস হয়? একটা বেলুনও ফাটেনি, দশটা ফায়ারে। এমন এক বন্দুকবাজের হাতে যাকে স্বচক্ষে দেখেছি আমের বোঁটায় ফায়ার করে আম পেড়ে নামাতে! 
 
অবশ্য একটা কারণও যে না ছিল তা নয়। না, একটা নয়, দুটো হেতু। প্রথমত ভূতোদার লক্ষ্য দূরের কোনও ছোট্ট বেলুন। যার মার্কা তিনশ থেকে পাঁচশ। কাছাকাছির বেলুন সে টিপই করছে না। দ্বিতীয় কথা, -- ভূতোদা একটা করে মিস্ করে আর কে যেন পিছনে ভিড়ের মাঝখানে খামোখা গলা খাঁকাড়ি দেয়। কে আবার? ঐ জিবেগজাটা। আমি বলি, মারি তো হাতি, লুঠি তো ভাণ্ডারের আশা ছেড়ে দাও, ভূদ্দা। একটা বিশ-পঞ্চাশী বেলুন ফাটিয়ে অন্তত বউনিটা কর দিকিন? অন্তত একটা ফটাস তো কানে শুনি! 
 
কে কার কথা শোনে? আর ভূতোদা চিরটা কাল এক নম্বর গোঁয়াড়। সে বাকি বাইশটা ফায়ার করল একটা পাঁচশো নম্বর লেখা বেলুনে। সব কটাই ফস্কালো! বত্রিশটা ফায়ার করে ওর স্কোর: ---- শূন্য। 
 
নেড়া বলে, কী হল বলতো ভুদ্দা? দোকানি কি কিছু তুকতাক করেছে? ভূতোদা বলল, তুকতাকে আমি বিশ্বাস করি না। আসল ব্যাপার হল – মাছি
 
 -- মাছি! মানে? 
 
ভূতোদা আমাদের জবাব দিল না। সোজা গিয়ে চ্যালেঞ্জ করল দোকানিকে, -- আপকে মক্ষিকামে গলতি হ্যায়। দোকানি তো আকাশ থেকে পড়ে! আমরাও। ভূতোদা তখন এয়ারগান - এর ফোরসাইট বা মাছিটাকে দেখায়। যেটা দেখে বন্দুকধারী টিপ্ করে। বলে, আপকে বন্দুকমে য়ো নিশানা গলতি হ্যায়। 
 
দোকানি তো হেসেই বাঁচে না। বলে, বাবুজী! বে-ফাজুল দিমাগ খারাপ করবেন না। মেরি বন্দুক মে কোই গলতি নহী। বলকি আপহি কা নজর ঠিক নেহী হায়, এলেম নেহী হায়, মায় ক্যা করু? 
 
ভূতোদা পকেট থেকে একটা সিকি বার করে বললে, য়ো চৌ-আনি সে আটটা ছররা খরিদিয়ে, ঔর হমকো দেখাইয়ে কি আপকা বন্দুককী নিশানা ঠিক হ্যায়। 
 
দোকানি তাতে রাজী নয়। তার যুক্তিটাও ফেলে দেবার নয়। সে হিন্দি মেশানো বাঙলায় বলে, আমি তো বলিনি যে, আমি একজন এলেমদার বন্দুকবাজ। আমি বুড়ো মানুষ। চোখে ছানি পড়েছে। আমি তো সেরেফ দোকানদার। আমি কেন বন্দুক ছুঁড়তে যাব? 
 
দোকানে আর যারা উপস্থিত ছিল তারাও দোকানদারের পক্ষ নিল। আসলে যারা লাইনে দাঁড়িয়ে ছররা কিনেছে তারা এই তর্কাতর্কিতে বিরক্ত। তারা এবার বন্দুক ছুঁড়তে চাইছে। ভূতোদা বন্দুকটা ফেরত দিয়ে দিল। 
 
ওমা, এ কী! ভূতোদার পরেই লাইনে ছিল জিবেগজা ওরফে গজেন। সে বন্দুকটা নিয়ে তাক করে ছুঁড়ল। কী দারুন বরাত! প্রথম ফায়ারেই একটা বিশ নম্বরী বেলুন ফাটলো, -- ফটাস্। জিবেগজা ভূতোদার দিকে তাকিয়ে হাসল। দোকানি বললে, দেখিয়ে বাবুজী। যিসকা নিশানা ঠিক নহী হায়..... ভূতোদা আমাদের বললে, চলে আয় তোরা। লোকটা ফোর-টোয়েন্টি। ওকে এভাবে কব্জা করা যাবে না। 
 
আমি বলি, তা পালিয়ে গেলে ওকে কীভাবে কব্জা করা যাবে? ততক্ষণে জিবেগজা দু নম্বর বেলুন ফাটিয়েছে-এটা দশ দুকুনে বিশ পয়সা। দোকানি বললে, দেখিয়ে, দেখিয়ে বাবুজী। ভূতোদা বললে, তোবা আসবি? না আমি একাই যাব? 
 
গজেন আমাকে বলে, যা যা ভূতো-জ্যেঠার পিছু পিছু যা। নইলে ভূতোজ্যেঠা ক্ষেপে যাবে। 
 
কোথায় চলেছে ভূতোদা? জানি না। তবে গুরুবাক্য বিনা প্রশ্নে মেনে নিতে হয়। আমরা পাঁচজনও ছুটতে থাকি ওর পিছু পিছু। ভূতোদা এসে থামল একটা টালিছাওয়া পাকাঘরের সামনে। বাইরে লেখা আছে -- ম্যানেজারের অফিস। 
 
এতবড় মেলায় রাজ সরকারের তরফে একজন ম্যানেজারবাবু আছেন। প্রৌঢ় মানুষ, চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। সন্ধ্যা থেকেই এসে বসেন অফিসে। রাত দশটা পর্যন্ত থাকেন। ওদিকে সদর থানার দারোগাবাবুও সন্ধ্যাবেলা সপরিবারে এসে হাজির হন। তাঁর গিন্নি কাচ্চাবাচ্চাদের নিয়ে মেলায় ঘোরেন, আর কর্তামশাই অফিসে বসে শান্তিরক্ষার অছিলায় ম্যানেজারবাবুর আপ্যায়নের অত্যাচার সহ্য করেন। কোনওদিন শরবৎ, কোনদিন বা চা-সিঙাড়া। এছাড়া থাকে সন্দেশ, সরপুরিয়া, সরভাজা ইত্যাদি। 
 
আমরা আধডজন মস্তান যখন সেখানে গিয়ে পৌঁছালাম তখন ঘটনাচক্রে দারোগাবাবু উপস্থিত। ভূতোদা তার অভিযোগটা ব্যক্ত করল। মেলার একত্রিশ নম্বর তাঁবুতে যে লোকটা বেলুন ফাটানোর ব্যবসা খুলেছে সে লোকটা জোচ্চোর। ম্যানেজারবাবু জানতে চান, কেন বাবা? কী করে বুঝলে? 
 
ভূতোদা তার অভিজ্ঞতা বিস্তারিত জানালো। বলল, তার এয়ারগানের টিপ্ বেশ ভালই। বলে-বলে সে বুলস্ আই হিট করে। অথচ এখানে বত্রিশটা ফায়ার করে একটা বেলুনও ফাটাতে পারেনি। 
 
দারোগাবাবু জানতে চান, তুমি কলেজিয়েট স্কুলের ফুটবল-টিমে গোলকিপিং কর, তাই না? ভূতোদা বলে, -- তা করি। আবার শীতকালে উইকেট-কীপিংও করি। কিন্তু তার সঙ্গে ঐ জোচ্চোরটার কী সম্পর্ক? 
 
ম্যানেজারবাবু বলেন, আহাহা, অহেতুক লোকটাকে জোচ্চোর ভাবছ কেন? ও যে জুয়াচুরি করছে তা তুমি বুঝলে কী করে? 
 
-- ঐ তো বললাম। বত্রিশটা ফায়ার করে একটা বেলুনও ফাটাতে না পারায়। ও নিজের বন্দুকের ঐ নিশানাটা, মানে মাছিটা হাতুড়ি মেরে সরিয়ে দিয়েছে নিশ্চয়....। ন্যাড়া ফস্ করে বলে বসে, কিন্তু জিবেগজাটা তো পরপর দুটো বেলুন ফাটালো? 
 
দারোগাবাবু জানতে চান, জিবেগজা কে? সে কখন বেলুন ফাটালো? আমিই ব্যাপারটা বুঝিয়ে বললাম। জিবেগজা কে, ও কখন বেলুন ফাটিয়েছে। 
 
 ম্যানেজারবাবু বলেন, তাহলে তো ল্যাটা ঢুকেই গেল। দোকানি যদি বন্দুকের নিশানা নড়িয়ে দিয়ে থাকে তাহলে সেই খাজা-গজা কী করে বেলুন ফাটায়? ন্যাড়া বলে, খাজা-গজা নয়, জিবেগজা! 
 
-- ঐ হল। একই কথা। 
 
দারোগাবাবু বললেন, না, হল না। আমাকে ব্যাপারটা সমঝে নিতে দিন। সমস্ত কথা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে শুনে দারোগাবাবু ভূতোদাকে বললেন, তুমি ঠিকই ধরেছ হে ছোকরা। ও লোকটা বন্দুকের নিশানা নড়িয়ে দিয়েছে। শোন, তুমি সাইকেলে চেপে নিজের এয়ারগান আর এক মুঠো ছররা নিয়ে এস তো ভাই। আমি ব্যাপারটা তদন্ত করে দেখতে চাই। কতক্ষণের মধ্যে ফিরে আসতে পারবে? 
 
-আঠারো থেকে বিশ মিনিট। 
 
-না। আধঘণ্টার আগে ফিরে এলে হবে না। পথে কোনও অ্যাকসিডেন্ট বাধিও না। ধীরে সুস্থে নিজের এয়ারগানটা নিয়ে এস তো দেখি? 
 
ভূতোদা ঝড়ের বেগে বেরিয়ে গেল। 
 
ম্যানেজারবাবু বললেন, কিন্তু একটা কথা, দারোগাবাবু। লোকটা যদি ওর বন্দুকের মাছি সরিয়ে-নড়িয়ে দিয়ে থাকে তাহলে ঐ খাজা-গজা না কী-যেন নাম, সে ছোকরা কী করে বেলুন ফাটালো? 
 
দারোগা বলেন, এটা স্রেফ অঙ্কের হিসেব। ধরুন, ও লোকটা নিশানা ত্রিশ মিনিট বাঁকিয়ে দিয়েছে- 
 
ম্যানেজারবাবু বলেন, সে আবার কী কথা? ওটা কি ঘড়ি? বন্দুকের নিশানায় আবার ত্রিশ মিনিট কাকে বলে? দারোগাবাবু আমাদের দিকে ফিরে বলেন, তোমরা কেউ কিছু বুঝেছ? 
 
আমি বলি, আজ্ঞে হ্যাঁ, আপনি হাফ-এ-ডিগ্রির কথা বলছেন। কৌণিক মাপ, -- মিনিটে। ষাট মিনিটে এক ডিগ্রি। - কারেক্ট। দিন তো ম্যানেজারবাবু প্যাড আর পেন্সিলটা। 
 
দারোগাবাবু একটা নকশা ছকে বললেন, মনে কর এই সরলরেখাটা হচ্ছে সঠিক পথ, -- নিশানা পালটানো না হলে যে পথে গুলি ছুটে যাবার কথা। আর এটা হচ্ছে ভ্রান্ত পথ, -- যে পথে এখন গুলিটা যাচ্ছে, মাছিটাকে সরিয়ে-নড়িয়ে দেওয়ায়। তাহলে দেখ, ভুল পথে গেলেও দশ ফুট দূরের বেলুনটা বিদ্ধ হচ্ছে। বেলুনের কেন্দ্রবিন্দুতে গুলিটা বিদ্ধ হচ্ছে না বটে, হচ্ছে এক পাশে। তবু তা ফাটবে। কিন্তু ভূতনাথ দূরের বেলুনকে বারে বারে লক্ষ্য হিসাবে স্থির করেছে। তাই বারেবারেই লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে। কারণ দশ ফুট দূরে গুলিটা মাত্র এক ইঞ্চি পরিমাণ লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেও, ত্রিশ ফুট দূরে সেটা হয়ে গেছে তিন ইঞ্চি। যেহেতু দূরস্থিত বেলুনটা আকারে ছোট তাই লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। 
 
আমরা সবাই অঙ্কের ব্যাপারটা ভালো করে সমঝে নিতে নিতেই ভূতোদা তার নিজস্ব এয়ারগান সমেত ফিরে এল। তার পকেট-বোঝাই ছররা। 
 
দারোগাবাবু বললেন, চল তোমরা সবাই। ম্যানেজারবাবু, -- আপনিও আসুন। ম্যানেজারবাবু কাঁইকুই করেন, আবার এই বুড়ো মানুষটাকে ধরে টানাটানি করছেন কেন? 
 
-- প্রয়োজন আছে বলেই করছি। কথায় বলে, বিবাদটা থানা-আদালতে গড়িয়েছে। তা থানাতে তো পৌঁছেই গেছে। আদালতেও গড়াতে পারে। আপনাকে কিছু করতে হবে না। আপনি শুধু সাক্ষী হিসাবে উপস্থিত থাকবেন। 
 
আমরা সদলবলে ঢুকতেই দোকানি লোকটা উঠে দাঁড়ালো। সেলাম বাজিয়ে বালিয়া জেলার দেহাতি ভাষায় বলল, আঁয়ি, আঁয়ি, দারোগাবাবা -- সাহেব, ইধর পাধারিয়ে। কুছ ঠান্ডাই বোলাই? 
 
দারোগাবাবু বিশুদ্ধ বঙ্গভাষায় বললেন, হ্যাঁ, ঠাণ্ডা করে দেবার জন্যেই এসেছি। শোন হে, এই বাবুকে বত্রিশটা গুলি ছুঁড়তে দিতে হবে, -- ওর নিজের বন্দুকে, নিজের গুলি। -- এই ধর তোমার আট-আনা। 
 
বিনয়ের অবতার দোকানি রুখে ওঠে, কেঁও সাব? ক্যা মেরি বন্দুকমে কুছ গলতি হৈ? 
 
-- হৈ কি নেহী হৈ, সেটাই যাচৈ করতে চৈ, বাবা। 
 
যার হাতে বন্দুকটা ছিল, উঠতি জোয়ান একটি তরুণ, সে বললে, আপনি লাইনে দাঁড়ান। আমার পর আপনার চান্স আসবে। দারোগাবাবু বললেন, আপনি আমাকে চেনেন না, তাই ওকথা বললেন। আমি সদর থানার দারোগা। দোকানির বন্দুকের নিশানা ঠিক আছে কি না জনস্বার্থে সেটা যাচাই করতে চাই। আপনি সরে দাঁড়ান। 
 
 ভূতোদা এগিয়ে এল। এখন রঙ্গমঞ্চে সেই হিরো। বললে, নরেন, দ্যাখ তো ছোট-বড় হাতি কটা আছে, এ জঙ্গলে ....... 
 
-- হাতি? মানে? 
 
-- তুই বলেছিলি না যে মারি তো হাতি, লুটি তো ভাণ্ডার করতে? এখন আমি শুধু হাতিই মারব। জিবেগজার মতো ছুঁচো মেরে হাতে গন্ধ করব না। বেশি দামের বেলুন কটা আছে? 
 
আমি ওকে দেখিয়ে দিলাম, পাঁচশ মার্কা বেলুন আছে মাত্র একটি, সাড়ে-চারশ দুটি, আর চার শ তিনটে। ভুতোদা বললে, বাস, ব্যস, অত আমার মনে থাকবে না। দাঁড়া আগে বড় হাতির পেটটা ফটাস্ করি – 
 
টিপ করে প্রথম ফায়ারেই সবচেয়ে দূরের সবচেয়ে ছোট্ট বেলুনটা: ফটাস্। তার নম্বর পাঁচশো। আমরা পাঁচ বন্ধু চিৎকার করে উঠি, -- হুররে। 
 
ভূদ্দা বললে, গোল করিস না। কনসেনট্রেশান নষ্ট হয়ে যাবে। সে আবার দ্রাম করে ফায়ার করল। সেকেণ্ড উইকেট ডাউন! সাড়ে চারশ মার্কা প্রথম বেলুনটা। দোকানির চোয়ালের নিম্নাংশটা ঝুলে পড়ল। 
 
প্রথম দশটা ফায়ারে ওর স্কোর চার হাজারের কাছাকাছি। চার হাজার পয়েন্ট মানে একশ পঁচিশ টাকা। যে বাজারে ল্যাংড়া আমের দর তিন টাকা শ। প্রথম শটেই তো পাঁচ শ ফেটেছে। সাড়ে চার আর চার শ নম্বরী বেলুন সব খতম। এবার ও ফাটাচ্ছে সাড়ে তিনশ মার্কা বেলুন। 
 
দোকানি কাটা কলাগাছের মতো ধ্রাশ করে পড়ে গেল দারোগাবাবুর ঠ্যাং জোড়ার উপর। জান বাঁচাইয়ে দারোগা বাবা। মর যাউঙ্গা। বিলকুল মর যাউঙ্গা। বালবাচ্ছা লেকর ম্যয় ভি ফটাস হো যাউঙ্গা। 
 
ভূতোদা আমাকে বললে, তুই বাইরে গিয়ে একটা ঠেলার ইন্তেজাম কর তো নরেন। বত্রিশটা ফায়ারের পর এ তাঁবুতে ঐ বুড়োটা ছাড়া আর কিছু থাকবে না। গুদাম সাবাড় করে ছাড়ব আমি। 
 
ন্যাপলা বলে, ঠ্যালার কী দরকার ভূতোদা? এখানেই নিলামে সব ঝেড়ে দিয়ে খালি হাত পায়ে, -- কিন্তু ভর্তি পকেটে বাড়ি ফিরব। না হলে বাড়িতে কৈফিয়ৎ দিতে দিতে জান নিকলে যাবে।
 
 নেড়া বললে, ন্যায্য কথা। প্রমাণ করতে পারব না তো যে, এ গুলো চোরাই বা লুঠের মাল নয়। দারোগাবাবু বলেন, তোমার তো দারুণ টিপ হে ভূতনাথ। শুটিং কম্পিটিশনে নাম দাও না কেন? 
 
ভূদ্দা বলে, এ বছর দেব! আপাতত এর গুদামটা সাবাড় করতে দিন। 
 
কিন্তু দোকানি ওর বন্দুকের সামনে বুক পেতে দাঁড়ায়। আর গুলি ছুঁড়তে দেবে না সে। তাহলে বালবাচ্চা নিয়ে সে মরেই যাবে। দারোগাবাবুকেই সে সালিশ মানে। 
 
দারোগাবাবু বলেন, অল রাইট। আমি বিচার করে দেব। কিন্তু আমার বিচার তোমরা দুজন এক কথায় মেনে নেবে তো? পরে আপত্তি করবে না? 
 
দোকানি আর ভূদ্দা দুজনেই রাজি হল। ভূদ্দা প্রথমটা গাঁইগুই করছিল; কিন্তু শেষমেশ আমার পরামর্শ শুনল। ম্যানেজারবাবুও অনুরোধ করলেন ওকে, এই সালিশী মেনে নিতে। 
 
দারোগাবাবু দোকানিকে বললেন, প্রথম কথা, তোমার বন্দুকের নিশানা ঠিক নেই। তুমি জুয়াচুরি করছিলে এটা প্রমাণ হয়েছে। তুমি অপরাধ স্বীকার করছ? 
 
দোকানী গরুড়পক্ষীর ভঙ্গিতে জোড়হস্তে বললে, হুজুর মাইবাপ। 
 
-- সেটা কোন কথা নয়, আমি তোমার মা-বাপ, কি ঠাকুর্দা, সেটা কথা নয়, কথা হচ্ছে তুমি অন্যায় করেছ! কবুল খাচ্ছ? 
 
-- জো হুকুম, হুজুর! 
 
-- তোমার তাঁবু আমি সীল করে দিয়ে যাচ্ছি। তুমি তোমার বন্দুকটা নিয়ে কলকাতা চলে যাও। মেরামত করিয়ে নিয়ে এসে আমাকে খবর দেবে। এই ভূতনাথবাবু সেটা চেক্ করে পাস করে দিলে আবার দোকান চালু করতে পারবে। সমঝা? 
 
-- জী হুজুর। 
 
-- আর ভূতনাথ ভাই! তোমার উপর তিনটে আদেশ। প্রথম কথা, তুমি ইচ্ছেমতো তোমার পাঁচ বন্ধুর জন্য পাঁচটা স্মৃতিচিহ্ন, যে পাঁচটা তোমার পছন্দ, উঠিয়ে নাও। আর নিজের জন্য একটা। কেমন রাজি? 
 
ভূদ্দা বললে, না, স্যার। আমাকে আরও দুটো জিনিস দিতে হবে। ঐ ছয়টার উপর। ঐ মোরাদাবাদী ফুলদানিটা, -- ওটা আমি উপহার দেব ম্যানেজারবাবুকে, আর দেওয়াল ঘড়িটা। সেটা আপনাকে। 
 
দারোগাবাবু বিব্রত হয়ে বলেন, না, না। আমি বিচারক। আমার উপহার নেওয়া ভাল দেখায় না। ম্যানেজারবাবু বলেন, না, স্যার। আপনি বিচারক নন, আর্বিট্রেটার, মানে সালিশী। বিবদমান দুই পক্ষের ঝগড়া-কাজিয়া যিনি মিটিয়ে দেন তাঁর পক্ষে ফিজ নেওয়া বে-আইনী নয়। দোকানি পাদপূরণ করে, দেওয়াল ঘড়ি আপকো মেহেরবানী করকে লেনেই পড়েগা হুজুর। 
 
দারোগাবাবু বললেন, ঠিক আছে, আপনারা পাঁচজনে যখন এত পীড়াপীড়ি করছেন, তখন ঘড়িটা না হয় স্মৃতিচিহ্ন হিসাবে আমি নিয়েই যাব। কিন্তু তোমার আরও দুটো কাজ আছে ভূতনাথ। 
 
-- বলুন স্যার। 
 
-- প্রথম কথা, এই দোকানদার কলকাতা থেকে বন্দুকের নিশানা ঠিক করিয়ে আনার পর তুমি তা পরীক্ষা করে সার্টিফাই করবে, 
 
-- করব। 
 
-- সেকেন্ডলি, আমি এ দোকানের সীল খুলে দিলে মেলা শেষ হওয়া তক্ তুমি এ তাঁবুতে এসে আর বেলুন ফাটাবে না। 
 
ভূতোদা গুম হয়ে বলে, এটা কেমন বিচার স্যার? কোন্ অপরাধে আমার এ শাস্তি? 
 
-- না, ভূতনাথ ভাই। কোন অপরাধের জন্য নয়। এ লোকটা অন্যায় করেছে। তার সাজা আমি ওকে দিচ্ছি। এ কয়দিনে ও যত মুনাফা করেছে তা আজকে দশ মিনিটে কর্পূরের মতো হাওয়ায় উবে গেল। লোকটার এটাই উপজীবিকা। আমি তো এক অপরাধে ওকে দু-বার শাস্তি দিতে পারি না। তুমি তোমার দুর্দান্ত টিপের জন্য পুরস্কারও পেয়ে যাচ্ছ। তোমারও উচিত লোকটাকে সৎ পথে উপার্জন করতে সাহায্য করা। ক্ষমা করা। তাই না। 
 
ভূদ্দা এক কথায় মেনে নিল। বললে, ঠিক আছে, স্যার। কিন্তু পরের বছর ও যদি বারোদোলের মেলায় আবার আসে? 
 
-- পরের বছরের হিসাব পরের বছর হবে। আমি তো এখানে পার্মানেন্ট সেটলমেন্ট করতে বসিনি। এ বছর তুমি এ তাঁবুতে এসে আর বন্দুক চালাবে না। বাকি কয়দিনে ওকে লোকসান যতটা সম্ভব পুষিয়ে নিতে দাও। 
 
ভূদ্দা বললে, -- অল রাইট, স্যার। মেনে নিলাম আপনার রায়। তাই হবে। 
 
-- গুড। এবার বল, তুমি দোকান থেকে কী কী উঠিয়ে নেবে? 
 
ভূদ্দা আমাদের পাঁচ বন্ধুর জন্য একটাই স্মৃতিচিহ্ন তুলে নিল, -- চ্যাম্পিয়ান সাইজ একটা ক্যারাম বোর্ড। আমাদের পাঁচজনের যৌথ উপহার। ম্যানেজারবাবুর জন্যে সে তুলে নিল একটা মোরাদাবাদী কাজ করা ফুলদানি। আর দারোগাবাবুর জন্য দেওয়াল ঘড়িটা। 
 
-- আর তোমার নিজের জন্য? 
 
-- ঐ ডন ব্র্যাডমানের সই ছাপা উইলো-কাঠের ক্রিকেট ব্যাটটা, স্যার। 
 
দোকানি খুশি হয়ে বললে, -- বহুৎ খুব। লে যাইয়ে আর্জান সরদার! আপকা ইনাম। 
 
ভূদ্দা বলে, আর্জান সরদার মানে? 
 
দারোগাবাবু বুঝিয়ে দেন, ও বলছে অর্জুনের কথা। দ্রৌপদীর স্বয়ম্বর সভায় যে অর্জুন লক্ষ্যভেদ করে তাঁর অব্যর্থ টিপের নমুনা দেখিয়েছিলেন। অর্জুনের নামই অপভ্রংশে, - আর্জান! সে হিসাবে ঐ ব্যাটটার নাম, --- দ্রৌপদী।
 
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এই গল্পটি শুনতে হলে নিচের লিংকে ক্লিক করুন: 

বেলুন ফটাস্। নারায়ণ সান্যাল। মজার গল্প। গল্প পাঠে : অনুব্রতা Narayan Sanyal. Comedy Story Bhutayan

No comments:

Post a Comment