রায় এন্টারপ্রাইজের কর্মচারী যারা সঙ্গে এসেছিল, বড়সাহেবকে নার্সিং হোমে নিজের ঘরটিতে পৌঁছে দিয়ে তারা একে-একে বিদায় নিয়ে গেল। যাবার আগে সবাই এই আশা প্রকাশ করে গেল যে, কালীপুজোর পরেই আবার সাহেবকে অফিসে দেখতে পাবে। অসীম রায় একটু হাসলেন ; বললেন, “দেখা যাক।” ঘরে রইলেন তাঁর স্ত্রী, তাঁদের একমাত্র ছেলে অচিন্ত্য ও পুত্রবধূ। ক্লান্ত বোধ করছিলেন অসীম রায়, তিনি সোফা থেকে উঠে বিছানায় শুয়ে পড়লেন।
অচিন্ত্য একটু হালকা সুরে বলল, “বাপি, একটুও ভাববে না। আজও সকালে ডক্টর দে আমাকে বলেছেন, চিন্তার কোনও কারণ নেই। তবে ওরা যে বলছিল, কালীপূজার পরেই অফিস যেতে পারবে, সেটা বোধহয় উচিত হবে না, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে নিশ্চয় পারবে।”
অসীম রায় ছেলের মুখের দিকে একবার তাকালেন, তারপর ঘড়ি দেখে বললেন, “তিনটে বাজে, তোমরা এখানে আর বসে থেকে কী করবে। খোকা, তুই বউমা আর তোর মাকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে অফিসে চলে যা। চারটের সময় দিল্লি থেকে সান্যালের টেলিফোন আসার কথা, এলে তুই কথা বলিস। রানারও ফেরার সময় হল।”
রানা তাঁর পাঁচ বছরের নাতি, এই সময় স্কুল থেকে ফেরে। অবশ্য রানার দেখাশোনার জন্য আয়া আছে, মা-ঠাকুমা না থাকলেও তার কোনও অসুবিধে হওয়ার কথা নয়। আসলে অসীম রায় একটু একা থাকতে চাইছিলেন।
ঘর থেকে সবাই বেরিয়ে গেলে দিনের বেলার নার্স এসে ঢুকল। পেশেন্টের টেম্পারেচার দেখে, পালস্ রেসপিরেশন গুনে সে ঘরের কোনায় চেয়ারে বসে একটা ছোট খাতায় লিখতে লাগল। অসীম রায় যে ইংরেজি উপন্যাসটা সঙ্গে এনেছিলেন, কিছুক্ষণ সেটা পড়বার চেষ্টা করে রেখে দিলেন। নার্সকে বললেন, “সিস্টার, জানলার পর্দাটা সরিয়ে দাও।”
পর্দা সরাতে চোখে পড়ল রাস্তার ওপারের বাড়িঘর, গাছের মাথার সারি, আর তাদের উপর শরৎকালের নীল আকাশ থেকে সোনালি রোদ্দুর ঝরে পড়ছে। এয়ার-কণ্ডিশন করা ঘরের বন্ধ দরজা-জানলা দিয়ে বাইরের কোনও শব্দ শোনা যাচ্ছে না, সমস্ত দৃশ্যটা একটা ফ্রেমে-আঁটা ছবির মতন লাগছে ! সেদিকে তাকিয়ে অসীম রায়ের অনেকদিন আগেকার কথা মনে এল। যখন তিনি স্কুলে পড়েন, প্রায় প্রতি বছর পুজোর ছুটির সময় তাঁকে নিয়ে তাঁর বাবা-মা মাসখানেকের জন্য কলকাতার বাইরে চেঞ্জে যেতেন। তিনি ছিলেন তাঁদের একমাত্র সন্তান। তখন আজকের মতো কাশ্মীর-কন্যাকুমারী বেড়ানোর রেওয়াজ ছিল না, অধিকাংশ চেঞ্জারের মতো তাঁরাও যেতেন মধুপুর, শিমুলতলা, দেওঘর বা বড়জোর রাঁচি, হাজারিবাগ।
স্কুল খুললে অ্যানুয়েল পরীক্ষা, এই দুশ্চিন্তা বাদ দিলে কী আরামেই দিন কাটত। সকালে বেড়ানো, বাজারে যাওয়া, ফিরে এসে কুয়োর জলে স্নান। দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পর বাড়ির সবাই ঘুমোলে বাইরে রেরিয়ে হয় কাঠবেড়ালির সঙ্গে দৌড়ের কম্পিটিশন লাগানো নয়তো খুঁজে দেখা কোন গাছে পেয়ারা বা আতা পাকতে শুরু করেছে, কোথায় কী পাখি বাসা বেঁধেছে, অথবা কোন্ নিরিবিলিতে বসে কাঠঠোকরা একমনে, কাঠ ঠুকরে চলেছে। এইসব কাজে প্রায় বিকেল হয়ে যেত। বিকেলে হাত-মুখ ধুয়ে নতুন জুতো-মোজা হাফপ্যান্ট শার্টের উপরে রঙিন পুলওভার চড়িয়ে বাবা-মা'র সঙ্গে আবার বেড়াতে যাওয়া। ফিরতে সন্ধে হয়ে যেত। নির্জন রাস্তায় কত রকমের গন্ধ এসে নাকে লাগত। ধানখেতের পাশ দিয়ে যাবার সময় একটি হালকা মিষ্টি গন্ধ পাওয়া যেত, কখনও দূর থেকে ভেসে-আসা কোনও ফুলের সুবাস, আবার কখনও আশেপাশের কোনও ঝাড় থেকে কেমন একটা বুনো-বুনো গন্ধ উঠে আসত। কোনওদিন দেখা যেত, আকাশে একফালি চাঁদ ঝুলে আছে, ম্লান জ্যোৎস্নায় আর হেমন্তের কুয়াশায় আবছা দেখাচ্ছে চারপাশ। বাড়ি ফিরে লন্ঠনের আলোয় বই খুলে ঢুলতে-ঢুলতে খাবার সময় হয়ে যেত।
কী আশ্চর্য, এতদিন এসব কথা তো মনে হয়নি ! এতদিন গেছে নিজেকে সংসারে প্রতিষ্ঠিত করতে৷ আর প্রতিষ্ঠা পাবার পর যে বিরাট ব্যবসা তিনি একার চেষ্টায় একটু-একটু করে গড়ে তুলেছেন, তাকে আরও বাড়িয়ে বিরাট করার চেষ্টায়। ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করে কলেজে যখন ঢুকেছেন, তখন তাঁর বাবা মারা গেলেন। সামান্য কিছু টাকা রেখে গিয়েছিলেন। তাঁর মা ছিলেন বি. এ. পাশ, তিনি একটা স্কুলে কাজ নিলেন। অনেক কষ্টে, অনেক পরিশ্রম করে, এ-দেশের লেখাপড়া সাঙ্গ করে, বিলেত থেকে ইঞ্জিনিয়ার হয়ে এলেন অসীম রায়। রায় এন্টারপ্রাইজের গোড়াপত্তনের কিছুদিন পরে তাঁর মা’ও মারা গেলেন। এর মধ্যে অসীম রায় বিয়ে করেছেন। তারপর কতগুলো বছর যে কোথা দিয়ে কেটে গেল ! খালি কাজ আর কাজ! ছেলেকে তিনি নিজের মতো করে মানুষ করেছেন। অফিসের সবার ধারণা, ছোটসাহেব বুদ্ধিতে আর পরিশ্রম করার ক্ষমতায় বড়সাহেবের চেয়ে কম যান না। তিনিও জানেন যে, তাঁর অবর্তমানে রায় এন্টারপ্রাইজ চালাবার ভার যোগ্য হাতেই বর্তাবে।
তাঁর অবর্তমানে ! তার মানে কী ? সবাই থাকবে, সবকিছু থাকবে, কেবল তিনি থাকবেন না, কোথায় যাবেন তিনি ? নাকি কোথাও যাবেন না, ফুঁ দিয়ে নেভানো মোমবাতির আলোর মতো, একেবারে মিলিয়ে যাবেন। এইসব ভাবনা কিছুদিন হল মাঝে-মাঝেই তাঁকে অস্থির করে তুলছে। মনকে অন্যদিকে ফেরানোর জন্য মাথার দিকে ছোট টেবিলটার উপরে যে উপন্যাসটা রেখে দিয়েছিলেন, তার দিকে হাত বাড়ালেন। আর তখনই তিনি দেখতে পেলেন ছেলেটাকে।
খালি গা, পরনে শুধু একটা ছোট ইজের, মাথায় তেল-ঢুকঢুকে পাতলা চুল. পাট করে আঁচড়ানো, চোখে ধ্যাবড়ানো কাজল, শ্যামবর্ণ একটি শিশু তাঁর বিছানা থেকে একটু দূরে হামাগুড়ির ভঙ্গিতে মেঝের কার্পেটের উপর দু’হাতে ভর দিয়ে হাসি-হাসি মুখে তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে। হাতে সরু-সরু দুটো বালা। ফাঁক-করা ঠোটের মধ্য দিয়ে দুটি খুদে-খুদে দাঁতের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
অসীম রায় চমকে গেলেন। এ কাদের খোকা ! পেশেন্টদের আত্মীয়-স্বজন যারা ভিজিটিং আওয়ারে আসে, তাদের কারও সঙ্গে এসেছে? কিন্তু তারা তো কেউ পোশাক না পরিয়ে বাচ্চাকে খালি-গায়ে আনবে না, বিশেষ করে এই নার্সিং হোমে। এখানকার স্টাফের কারও ছেলে ? তারাও এই নার্সিং হোমে বাচ্চাকে এ-রকম ছেড়ে দিতে সাহস পাবে না। তা ছাড়া, ওইটুকু বাচ্চা দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকল কী করে? নার্সের দিকে তাকিয়ে দেখলেন, সে গভীর মনোযোগ দিয়ে কী একটা বই পড়ছে। তাকে ডেকে বললে সে এখনই একটা হুলুস্থুলু বাধিয়ে দেবে। অসীম রায় সেটা চাইলেন না। এই ক’মিনিটের মধ্যেই ছেলেটার উপর কেমন যেন মায়া পড়ে গেছে তাঁর। তিনি হাত নেড়ে তাকে কাছে ডাকলেন, ছেলেটার মুখ আরও হাসি-হাসি হয়ে উঠল। কিন্তু সে কাছে এল না।
অসীম রায়ের নিজের নাতির কথা মনে পড়ল। তাকে এমন সাজে কখনও দেখেননি। বাচ্চাদের এইরকমভাবে সাজানো হত তাঁদের ছেলেবেলায়, মধ্যবিত্ত পরিবারে। এখনও হয় কি না জানেন না। তিনি তো আর মধ্যবিত্ত নন, তাঁর নাতির কথা আলাদা। রানার রেশমের মতন ফুরফুরে লালচে চুলে তেলের ছোঁয়া নেই, আর চোখে কাজল তো ভাবাই যায় না। একটু অন্যমনস্ক হয়েছিলেন অসীম রায়, হঠাৎ তাকিয়ে দেখলেন ছেলেটা ঘরে নেই, কখন যেন চলে গিয়েছে। রানার মতো ভিটামিন হয়তো খেতে পায় না, কিন্তু ছেলেটার গায়ে জোর আছে। নইলে ওই দরজা ঠেলে ঢোকে আর বের হয় কেমন করে! ওর বয়েসে রানা কখনওই পারত না।
সে-রাত্রে অসীম রায় ভাল ঘুমোতে পারলেন না। শরীর কাটা-ছেঁড়া হবে, যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে, সে তো তিনি জানেন। তারপর? তারপর কী হবে ? কিছুদিন হল তাঁর শরীর ভাল যাচ্ছিল না। মাঝে-মাঝেই জ্বর হচ্ছিল, পেটে কেমন একটা অস্বস্তি। বাড়ির ডাক্তার গোবিন্দবাবু প্রথমে সন্দেহ করেন। তিনি ডক্টর দে’কে ডেকে আনলেন। দে-সাহেব পেশেন্টকে পরীক্ষা করে, এক্স-রে প্লেট দেখে যে-রোগের নাম করলেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা মৃত্যুর পরোয়ানা বয়ে নিয়ে আসে। বাড়ির সবাই তাঁকে বুঝিয়েছিল যে, ডক্টর দে’র মতে সূত্রপাতেই রোগ ধরা পড়েছে, এখন অপারেশন করালে সম্পূর্ণ ভাল হয়ে যাবেন ! অসীম রায় বিশ্বাস করেননি, তাঁর সেক্রেটারিকে ধমক-ধামক দিয়ে সত্য কথাটা জেনেছিলেন। খুব বেশি না-ছড়ালেও এটা রোগের প্রথম অবস্থা নয়, এখনই অপারেশন করলে ডক্টর দে’র ভাষায়, “চান্স ফিফটি-ফিফটি”। তিনি যে জানতে পেরেছেন, বাড়ির লোককে অসীম রায় তা বুঝতে দেননি।
তাঁকে বিছানায় ছটফট করতে দেখে রাত্রের নার্স উঠে এল। বিছানার সামনে চেয়ারে বসে তাঁর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। অসীম রায় ঘুমের ভান করে পড়ে রইলেন। কিছুক্ষণ পরে নার্স উঠে গেলে তিনি যখন জোর করে ঘুমোতে চেষ্টা করছেন, হঠাৎ সেই ছেলেটার মুখ তাঁর চোখে ভেসে উঠল। আশ্চর্য, কেন ওই অচেনা ছেলেটার কথা মনে আসছে ! আবার সেইসঙ্গে মনে হল যেন ছেলেটা অচেনা নয়, ওকে আগেও তিনি দেখেছেন, কিন্তু কোথায়, তা ভেবে পেলেন না। ভাবতে-ভাবতে ধীরে-ধীরে তাঁর চোখে ঘুম নেমে এল।
পরের দিন সকালে বাড়ির লোকেরা সবাই তাঁকে দেখতে এল। অসীম রায় খুব বেশি কথাবার্তা বললেন না, একটু অন্যমনস্ক দেখাল তাঁকে। এর মধ্যে তাঁর রক্ত নেওয়া হয়েছে পরীক্ষার জন্য, ব্লাডপ্রেশার মাপা হয়েছে, ওষুধ যা খাবার ছিল খেয়েছেন। প্রায় সমস্তদিন ধরেই তাঁকে পরের দিনের অপারেশনের জন্য তৈরি করা হল। বলির আগের দিনের পাঁঠার কথা মনে হচ্ছিল তাঁর।
দুপুরবেলা একা-ঘরে তিনি টুপ করে চোখ বুজে শুয়ে আছেন। নার্স এককোণে বসে বই পড়ছে না ঘুমোচ্ছে বোঝা যাচ্ছে না। সেই নির্জন ঘরে হঠাৎ কে যেন কচিগলায় খিলখিল করে হেসে উঠল। অসীম রায় চমকে উঠে দেখলেন, সেই ছেলেটা ঠিক আগের দিনের মতন তাঁর নাগালের বাইরে মেঝেতে বসে হাসি-হাসি মুখে তাকিয়ে আছে। ছেলেটার হাসির শব্দ নার্সের কানে গেছে কি না দেখতে অসীম রায় তার দিকে তাকালেন। মনে হল নার্স কিছু শুনতে পায়নি, বইয়ের আড়ালে তার মুখ ঢাকা। অসীম রায়. বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালেন, ছেলেটাকে একবার ছুঁতে ইচ্ছে করল তাঁর। “কে রে, কে তুই ? কী চাস? কেন তুই রোজ আসিস এখানে?” -- তাঁর ভিতর থেকে কথাগুলো যেন আপনা থেকেই বেরিয়ে এল। ছেলেটা গলা দিয়ে একটা আওয়াজ করল। অসীম রায়ের মনে হল, তিনি না বুঝলেও ওই আওয়াজের মধ্যে তাঁর প্রশ্নের উত্তর আছে।
অসীম রায়ের কথাগুলো নার্স বোধহয় শুনতে পেয়েছিল, সে বই নামিয়ে তাঁর দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করল, তিনি কিছু চান কি না। অসীম রায় বললেন, “না।” তারপর আবার বিছানায় গিয়ে বসলেন। কিন্তু তখন আর ছেলেটাকে দেখতে পাওয়া গেল না।
পরের দিন ভোরেই অসীম রায়কে পরিষ্কার-পরিচ্ছন করে রাখা হল। বেলা দশটায় অপারেশন। একটি ছোকরা ডাক্তার হাসিমুখে তাঁর সঙ্গে কলকাতার আবহাওয়া, লোডশেডিং, পুজোর চাঁদার অত্যাচার এইসব বিষয়ে যে-ধরনের কথা সর্বত্র শোনা যায় তারই পুনরাবৃত্তি করতে করতে একটা ইঞ্জেকশন দিলেন। সেটা যে তাঁকে ঘুম পাড়ানোর জন্য, অসীম রায় তা বুঝলেন। আর-একটু বেলা হলে তাঁর বাড়ির লোকজন এলেন। অসীম রায়ের মনে হচ্ছিল, তিনি একটা ঘোরের মধ্যে আছেন সেই অবস্থায় স্ত্রী ছেলে এদের মুখে উত্কণ্ঠার কালো ছাপ দেখে তাঁর মন হুহু করে উঠল। তবে এই কি শেষ? আর এদের সঙ্গে দেখা হবে না?
দশটার একটু আগে পেশেন্টকে অপারেশন-থিয়েটারে নিয়ে যেতে ট্রলি এল। অসীম রায় ঘুমে-ভারী দু’চোখ জোর করে খুলে জানালার বাইরে আকাশের দিকে চেয়ে দেখলেন। কে জানে, যদি আজই এই দেখা শেষ হয়ে যায়। আর ঠিক তখনই তাঁর কানের কাছে কে যেন বলল, “কেন এত ভাবছ, কী হবে তোমার, আমি আছি, আমি থাকব।” অসীম রায় চোখ ফিরিয়ে দেখলেন, তাঁর খাটের পাশে টলমল পায়ে ছেলেটা দাঁড়িয়ে। কী যে বুঝলেন তিনি, তাঁর মন অনেকটা শান্ত হল”। এইবার যেতে হবে। অসীম রায়কে ট্রলিতে শোয়ানো হল। সেই সময় আবার সেই কচিগলায় কথা শুনতে পেলেন, “আমি আছি, আমি থাকব।”
ট্রলি ঘর ছেড়ে করিডরে বার হল। ঘুমে তাঁর দু’চোখ জুড়ে আসছিল, হঠাৎ বিদ্যুৎচমকের মতো তাঁর মনে পড়ল এই শিশুকে তিনি আগে কোথায় দেখেছেন। অনেক বছর আগে, তিনি বিলেত থেকে ফেরার পর একবার বাড়িঘর চুনকাম হচ্ছিল। জিনিসপত্র সব এ-ঘর থেকে ও-ঘরে সরাবার সময় তাঁর মা পুরনো ট্রাঙ্ক খুলে প্রায় হলদে হয়ে যাওয়া একটি ফোটোগ্রাফ তাঁকে দেখিয়েছিলেন। ফোটোতে তাঁর মা বসে আছেন, কোলে একটি শিশু। শিশুটির খালি গা, চুল পাট করে আঁচড়ানো, চোখে কাজল, দু'হাতে দুটো বালা, আর হাসিতে ফাঁক হওয়া ঠোঁটের ভিতর থেকে দুটো ছোট-ছোট দাঁত দেখা যাচ্ছে।
অসীম রায়ের মুখে একটু হাসির আভাস দেখা দিল। তারপর যেন নিশ্চিন্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন তিনি। বেয়ারারা ট্রলি ঠেলে অপারেশন-থিয়েটারের দিকে এগিয়ে চলল।
ছবি : অনুপ রায়
ছেলেটা
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment