তারানাথ তান্ত্রিকের গল্প (রামদুলালের বাড়ি)



লেখক: তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়

(লেখকের অন্যান্য রচনাগুলি পড়তে লেখকের নামের উপর ক্লিক করুন)

বিকেল। তারানাথের বৈঠকখানার আড্ডা জমে উঠেছে। রোজ রোজ তারানাথের স্বন্ধে কণ্টকী ফল ভগ্ন করা উচিত নয় ভেবে আমি আর কিশোরী মোড়ের তেলেভাজার দোকান থেকে গরম গরম বেগুনী আর ফুলুরী কিনে নিয়ে এসেছিলাম। এখন শুধু শালপাতা কটা পড়ে আছে। ভেতর থেকে দ্বিতীয়বার চা-ও এসে উপস্থিত। তৃপ্তির টেকুর তুলে তারানাথ বলল--নাঃ, উড়েগুলো বেশ ভাল তেলেভাজা করে, বুঝলে?

কিশোরী বলল--সব কিছুর স্বাদ নির্ভর করে মনের অবস্থার ওপরে। আজ এখন আপনার কোনো কাজ নেই, বেশ নিশ্চিন্দি আড্ডার মেজাজ। এখন বাসি তেলেভাজা পচা বেসনের ঠাণ্ডা ফুলুরীও ভাল লাগবে। আবার মাথায় দুশ্চিন্তা থাকলে দেরাদুন চালের বিরিয়ানিও মুখে রুচবে না। তাই নয়?

তারানাথ মৃদু হেসে চায়ে চুমুক দিয়ে বলল--কথাটা তোমাদের পক্ষে সত্য হলেও আমার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ খাটে না বোধ হয়।

বললাম--কেন? আপনার এ ব্যাপারে বৈশিষ্ট্যটা কি?

-- আছে। তোমাদের নিরাপদ তরঙ্গহীন জীবনে দুশ্চিন্তা এবং দুর্ভাবনা একটা অস্বাভাবিক অবস্থা। আর আমার সারাটা জীবনই কেটেছে নানা বিচিত্র ঘটনার ভেতর দিয়ে, সেখানে দুর্ভাবনা একটা স্বাভাবিক ঘটনা বলেই গণ্য করতাম। রাত্তিরে একটা ভয়ানক কিছু ঘটবে জেনেও দুপুরে ভোজ খেতে বাধেনি।

পরপর কয়েকটা চুমুকে চায়ের কাপ শেষ করে নামিয়ে রেখে তারানাথ বহুদিন আগেকার কথা মনে পড়ে যাওয়ার সুরে বলল--ভোজ খাওয়ার কথা উঠলেই আমার রামদুলাল মিত্রের কথা মনে পড়ে যায়। তাদের বাড়ি অতিথি হয়ে কয়েক দিন যা খাওয়াদাওয়া করেছিলাম, তেমন সচরাচর কারও ভাগ্যে জোটে না।

কিশোরী বলল--বেড়াতে গিয়েছিলেন?

-- আরে না না, আমার আবার বেড়াতে যাওয়া! গিরেছিলাম কাজে। বিপদে পড়ে তারা ডেকে নিয়ে গিয়েছিল। সে অনেক কাণ্ড!

বললাম--গল্পটা হোক বরং, শুনতে মন্দ লাগবে না মনে হচ্ছে।

তারানাথ মনে মনে একটু গুছিয়ে নিয়ে বলতে শুরু করল।

বছর কুড়ি আগেকার কথা। মধুসুন্দরী দেবীর ব্যাপার মিটে গিয়েছে। বাড়িতে বসে ঘোরতর সংসার করছি। এর সঙ্গে হাত দেখি, কবচ দিই, মুখ দেখে ভাগ্যগণনা করি। আয় মন্দ হয় না, আবার খরচও হয়ে যায়। পয়সা জমাতে পারি নি কোন দিন। দেবী বলেই দিয়েছিলেন—অন্নের কষ্ট হবে না, কিন্তু ধনীও হতে পারব না।

একদিন সকালে বৈঠকখানায় বসে আছি, একজন মধ্যবয়স্ক ভদ্রলোক ঘরে ঢুকলেন। কাঁচায়- পাকায় মেশানো চুল, বেশ বলিষ্ঠ ধাঁচের মাঝারি গড়নের চেহারা। পরনে দামী কাঁচি ধুতি, পাঞ্জাবিতে সোনার বোতাম। ডান হাতে অনেকগুলো পাথর বসানো আংটি। চেহারায় বড়মানুষীর ছাপ আছে। ব্যক্তিত্ব-সম্পন্ন মানুষ।

ভদ্রলোক আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন--আপনিই কি তারানাথ জ্যোতিযার্ণব?

-- আজ্ঞে হ্যাঁ। কি দরকার বলুন?

ভদ্রলোক এগিয়ে এসে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে বললেন--চেহারা দেখেই অবশ্য আন্দাজ করতে পেরেছিলাম।

বললাম---আহা থাক, হয়েছে। বসুন। কি চাই আপনার?

ভদ্রলোক বসে বললেন--আমার নাম রামদুলাল মিত্র। কোলকাতাতেই বড়বাজারের দিকে সামান্য ব্যবসাপাতি আছে। আপনাদের আশীর্বাদে মোটা ভাত-কাপড় হয়ে যায়। সম্প্রতি একটা বিপদে পড়ে আপনার কাছে এসেছি। কিন্তু ঠাকুরমশায়, কি বিপদ তা আমি বলব না। শুনেছি আপনি মানুষের মুখ দেখে তার ভূত-ভবিষ্যৎ বলে দিতে গারেন। আপনি বলুন দিকিনি, আমার বিপদটা কি? কিছু মনে করবেন না, ঠিক লোকের কাছে এসেছি কি না তা তো আমার জানা দরকার।

ব্যবসাদার লোকের মত কথা বটে। আমি মনে মনে হাসলাম। এ লোক ঘরে ঢোকামাত্র আমি বুঝতে পেরেছি কি বিপদে পড়ে ও এখানে এসেছে। তবে মিথ্যে ভেল্কি দেখিয়ে লোককে চমকে দিতে আমার প্রবৃত্তি ছিল না বলে ওকে দিয়েই বলিয়ে নেবার চেষ্টায় ছিলাম। তা বাজিয়ে নিতে চায় যখন তখন আমার আর বলতে আপত্তি কি?

বললাম--বিপদ তো আপনার আপাতত তিনটি দেখতে পাচ্ছি। প্রথমত আপনার ব্যবসা হঠাৎ একটা টাল খেয়েছে, কেমন কি না?

-- আজ্ঞে হ্যাঁ, তারপর?

-- এটার জন্য ভাবতে হবে না। এখানে বসেই বলে দিচ্ছি। আপনি নীল রঙের গণেশ গড়িয়ে পুজো করুন--আবার ব্যবসার মোড় ফিরবে।

রামদুলাল বললেন--আর?

আপনার বাস্তুবিঘ্ন আছে দেখতে পাচ্ছি। বসতবাড়ি-সংক্রান্ত কোন গোলযোগে পড়বেন কিংবা পড়েছেন।

রামদুলাল চোখ বড় বড় করে বললেন--ধন্য! শুনেছিলাম, আজ চোখে দেখলাম। কিন্তু তিন নম্বরটা কি?

বললাম--বলবো? ওটা আপনি নিজেই মিটিয়ে নিতে পারবেন, আমার সাহায্য দরকার হবে না। কিছু টাকা এককালীন দিয়ে যাওয়া বন্ধ করুন।

রামদুলাল মাথা নিচু করে লজ্জিত মুখে বললেন--কি আর বলব ঠাকুরমশায়, প্রবৃত্তি বড় বলবান। অপরাধ করে ফেলেছি, এখন প্রায়শ্চিত্ত তো করতেই হবে। পাপ ছাড়ে না বাপকে।

বললাম--অনুতাপ যখন হয়েছে তখন পাপ আর নেই। ঘরে মা-লক্ষ্মী আছেন তো?

-- আজ্ঞে তা আছেন।

-- তাকে নিয়েই সুখী হতে হবে। মনে মনে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেবেন।

-- আজ্ঞে যা বলছেন করব। এখন আমার এ বিপদ থেকে উদ্ধার পাবার পথ বলে দিন।

-- খুলে বলুন।

রামদুলাল বললেন---ছোটবেলায় বড় কষ্টে মানুষ হয়েছি ঠাকুরমশায়। বাপ-মা অল্প বয়সে মারা গিয়েছিলেন। কুলিগিরি করে, মাথায় মোট বয়ে, একটা-একটা করে পয়সা জমিয়ে ব্যবসা শুরু করি। প্রথম জীবনে থাকার জায়গা ছিল না, কখনও কখনও রাস্তায় শুয়েও রাত কাটিয়েছি। আজও আমার কোলকাতায় কোন বাড়ি নেই। বড় একখানা বাড়ি আস্ত নিয়ে থাকি বটে, কিন্তু সেটা ভাড়া-বাড়ি। বাড়ি কিনতে পারতাম, কিন্তু সত্যি বলতে কি, কোলকাতায় বাড়ি করতে ইচ্ছে যায় না। ছোটবেলায় গ্রামে মানুষ, আর কটা দিন পরে ছেলেদের হাতে ব্যবসা দিয়ে আবার গ্রামে গিয়ে বাস করব ঠিক করেছি। তা গত বছর শেষের দিকে এক দালাল খবর আনল রাজবলহাটের কাছে এক গ্রামে একটা খুব ভাল বাড়ি বিক্রি আছে। নতুন বাড়ি না হলেও সামান্য মেরামত করে নিলে নতুনের মতই দাঁড়াবে। সেখানকার জমিদারদের বাড়ি। জমিদার মারা গিয়েছেন, জমিদারি বিক্রি করে ছেলেরা কোলকাতায় উঠে আসতে চায়। বাড়িও আর রাখবে না, নামমাত্র দামে বেচে দিচ্ছে। দালালের মাধ্যমে দূর করে বাড়ি তো কিনলাম ঠাকুরমশায়। অনেক আশার বাড়ি। কিন্তু এখন সে বাড়িতে বাস করা অসম্ভব হয়ে উঠেছে।

বললাম--কেন, কি হয়েছে?

-- আজ্ঞে বাড়িটায় অপদেবতার দৃষ্টি আছে। কেনবার পর আমরা সবাই কয়েকটা দিন থাকবার জন্য সেখানে গিয়েছিলাম। প্রথম দিনই আমার স্ত্রী কি দেখে রাত্তিরে ভয়ে চিৎকার করে উঠলেন। জানলার কাছে নাকি ছায়ার মত কি দাঁড়িয়ে ছিল। অথচ দোতলার জানলা, কোন খাঁজ বা কার্নিশ নেই। চোর কিন্বা ডাকাত কি বেয়ে উঠবে? পরের দিন সন্ধ্যের দিকে আমার বড় ছেলে শচীদুলাল পায়খানা করতে গিয়েছিল। কিছুক্ষণ বাদে ফিরে এসে বলল--বাবা, বাড়ির বাইরে কে বসে কাঁদছে বলুন তো? মেয়েছেলের গলা মনে হল--

কেমন সন্দেহ হওয়াতে তক্ষুনি চাকরবাকর নিয়ে লন্ঠন জ্বেলে দেখতে বেরুলাম। পায়খানা বাড়ি থেকে একটু দূরে, উঠোন পেরিয়ে যেতে হয়। তার পরেই পাঁচিল। এদিকের দরজা দিয়ে বেরিয়ে ঘুরে সেখানে পৌছে দেখি কোথাও কিছু না। পাঁচিলের পরেই ঘন ঝোপঝাড় আর আগাছার জঙ্গল। সেখানে বসে এই ভর-সন্ধ্যেয় কে কাঁদতে যাবে? কিন্তু কি বলব ঠাকুরমশায়, ফিরে আসতে গিয়ে পরিষ্কার শুনলাম কে যেন, খুব আকুল হয়ে কাঁদছে, স্ত্রীলোকের গলা। খুব কষ্টের কান্না। আবার ফিরে যাই, আবার দেখি। নাঃ, কোথাও কিচ্ছু নেই। একবার মনে হল শব্দটা যেন বাড়ির ভেতর থেকে আসছে। কেমন ভয় ধরে গেল--এসব কি কাণ্ড? এমন হওয়া তো ভাল কথা নয়।

পরের দিন গিন্নিকে কোলকাতায় ফেরত পাঠালাম মেজ ছেলের সঙ্গে। আমি আর শচী আরও দুদিন থেকে গেলাম। প্রত্যেক দিন সন্ধ্যেবেলা সেই কান্নার শব্দ শুনেছি। আর, কি বলব, বাড়িটার মধ্যে যতক্ষণ থাকি মন যেন কেমন বিষণ্ণ হয়ে থাকে। বুকে যেন একটা পাহাড়ের মত চাপ টের পাই। বাড়িটা ভাল নয় ঠাকুরমশায়। কিন্তু একগাদা টাকা খরচ করে কেনা বাড়ি--যাওয়া বন্ধ করলে তো পোড়ো হয়ে যাবে। অনেক শখ করে কেনা। এর কিছু উপায় হয়?

একটু ভেবে বললাম--আমাকে একবার নিয়ে যেতে পারেন সেখানে?

-- আজ্ঞে হ্যাঁ, তা পারি বইকি। আর সত্যি বলতে কি, আমি জানতাম আপনি যেতে চাইবেন। আমার মনে হয়েছিল। আপনি ভাববেন না কিছু, আপনার যাতায়াত, খাওয়া-দাওয়া এবং গরিবের সাধ্যমতো দক্ষিণা আমি দেব। কবে যাবেন বলুন?

-- আপনার কবে সুবিধা হয়?

-- পরশু সকালে তৈরি হয়ে থাকবেন। আমি এসে নিয়ে যাব।

রাজবলহাট থেকে মাইল তিনেক দূরে মতিপুর গ্রাম। বিকেল তিনটে নাগাদ গিয়ে সেখানে পৌঁছলাম। নিতান্ত পাড়াগাঁ বটে, কিন্তু বাড়িখানা সত্যি দেখবার মত। বিরাট দোতলা বাড়ি। একটা বার-বাড়ি, একটা ভেতরের মহল। সব মিলিয়ে প্রায় তেইশ-চব্বিশখানা ঘর। কাছাকাছি আর অন্য বসতি নেই। মূল গ্রাম কিছুটা দূরে।

আদর করে রামদুলাল আর শচী আমাকে ভেতরে নিয়ে গেল। কিন্তু কি জানো, বাড়িতে ঢুকেই আমার মনে হল--এখানে কোন গোলযোগ আছে। ঠিক কি যে হল, তা বলতে পারব না। তবে মনে একটা অস্বস্তির ভাব। চারদিকে বাতাস যেন এ বাড়ির চৌহদ্দির মধ্যে এসে আর বইছে না, একটাও পাখির ডাক নেই--গেরস্তর বাড়ি এমন শ্মশানের মত হবে কেন? ওই পাখির ডাক না শুনতে পাওয়াটা আমাকে সত্যি ভাবিয়ে তুলল। আমি দেখেছি মানুষের চেয়ে নিম্নস্তরের প্রাণীরা অশুভ প্রভাব সম্বন্ধে বেশি অনুভূতি প্রবণ হয়। ভূমিকম্প হবার আগে পোষা পাখি খাঁচার মধ্যে ছটফট করে জানো? মোটের ওপর সেখানে পৌছে বুঝতে পারলাম রামদুলাল বাজে কথা বলেনি।

যাই হোক, চাকর তক্ষুনি হাত-পা ধোবার জল এনে দিল। জামা-কাপড় বদলে আমি, রামদুলাল আর শচী বৈঠকখানায় এসে বসলাম। কোলকাতা থেকে চাঙাড়ি করে একগাদা খাবার এনেছিল রামদুলাল। এবার চাকর সেগুলো আমাদের পরিবেশন করে দিল। প্রচুর খাঁটি ঘিয়ে ভাজা লুচি, আলুর দম, বড় বড় জোড়া সন্দেশ, ছানার মুড়কি ইত্যাদি। বেশ খিদে পেয়েছিল। এক নিঃশ্বাসে প্রচুর খেয়ে ফেলার পরে যখন একটা হাঁড়ি থেকে রাবড়ি বেরুল, ভয় পেয়ে বললাম--না, আর নয়। অনেক হয়েছে।

রামদুলাল হাত জোড় করে বলল--আজ্ঞে, কি আর এমন আয়োজন? খুদকুঁড়ো বই তো নয়। সামান্য একটু নিন। আপনার কথা ভেবেই আনা--,

খাওয়া হলে রামদুলাল বলল -- একটা কথা বলব!

-- কি?

-- কিছু বুঝতে পারছেন? বাড়িটায় কি সত্যি কোন দোষ আছে?

আসল কথা না ভেঙে বললাম--এখনই কিছু বলা কঠিন। দেখি আজ রাতটা।

সন্ধ্যের অন্ধকার যখন বেশ গাঢ় হয়ে এসেছে, তখনই আমি কান্নার শব্দটা শুনতে পেলাম। আমার সামনে বসেছিল রামদুলাল। দেখলাম তার মুখ নিমেষে রক্তহীন সাদা হয়ে গেল। আমাকে বলল--ওই, ওই শুনছেন? সেই শব্দ--

বেশি করে বলবার দরকার ছিল না। কোথা থেকে যেন ভেসে আসছে একটা করুণ কান্নার শব্দ । স্ত্রীলোকের কান্নাই বটে। যেন খুব কষ্টে গুমরে গুমরে কাঁদছে। কোথা থেকে আসছে শব্দটা? একবার মনে হচ্ছে বাইরে থেকে, আবার মনে হচ্ছে খুব বেশি দূরে নয়—কাছাকাছিই বসে কাঁদছে কেউ।

-- বাবা!

দরজার কাছে শচীদুলাল এসে দীঁড়িয়েছে।--বাবা, শুনেছেন?

রামদুলাল কাঁপা গলায় বলল--শুনেছি, তুই ভেতরে চলে আয়।

বললাম--ভয় পেয়ো না, দাঁড়াও! আমাকে একটা লন্ঠন দাও তো।

চাকরটাও ভয় পেয়ে চলে এসেছে। তার হাতে একটা হ্যারিকেন। সেটা নিয়ে ঘর থেকে বেরুতে বেরুতে বললাম – তোমরা এইখানে থাক। ঘর থেকে বেরিও না। আমি একটু দেকে আসি।

কিন্তু দেখবটা কি? লষ্ঠন হাতে সারা বাড়ি তন্নতন্ন করে খুঁজলাম। আওয়াজের উৎস কোথায় ধরতে পারলাম না। এক এক সময় মনে হচ্ছিল যেন চারদিক থেকেই শব্দটা আসছে।এ কি ব্যাপার!

বৈঠকখানায় ফিরে আসবার পথে কান্নাটা থেমে গেল। ঘরে ঢুকে দেখি শচী আর রামদুলাল পাথরের মূর্তির মত চৌকিতে পা তুলে বসে আছে। ঝড়ে কাক মরলেও কেরামতি ফকিরের হয় জানো তো? আমার হল তাই। আমি লন্ঠন হাতে বেরুবার একটু পরেই কান্নাটা থেমে যেতে ওদের দুজনের ধারণা হল আমিই তন্ত্রের প্রভাবে আওয়াজটা বন্ধ করেছি। আমাকে দেখে রামদুলাল বলল--ওঃ, কি ভয়ানক শব্দ! কি করে থামালেন ঠাকুরমশায়? ভাগ্যিস আপনি এসেছিলেন!

ব্যাপারটা বুঝে চুপ করে রইলাম। ওদের ভুল ভাঙিয়ে লাভ নেই। আমার ওপরে ভরসা করে যতটুকু সান্ত্বনা পায় পাক্‌ না।

রাত্তিরে ভেতর-বাড়ির বারান্দায় আসন পেতে বসে আবার এক বিপুল আয়োজনের সম্মুখীন হওয়া গেল। পুজোর পরাতের মত বড় বগী থালায় সরু চড়ুইপাখির নখের মত চালের ঘি-ভাত, ভেড়ার মাংসের কোর্মা, রুইমাছের কালিয়া, তিন-চার রকমের মিষ্টি।

বলরাম--করেছ কি! এত কখনও খাওয়া যায়? আর তাও বিকেলে ওই জলযোগের পর? তুলে নাও--এর অর্ধেকও আমি খেতে পারব না।

রামদুলাল বলল--আমার এই চাকরটি বড় ভাল রাঁধে। পাকা হাত। শুধু রান্নার জন্যই ষাট টাকা মাইনে দিয়ে ওকে রেখেছি। আপনাকে রেঁধে খাওয়াবে বলে ওকে নিয়ে এলাম। আপনি না খেলে আমরা কষ্ট পাব। এমন কিছু বেশি তো নয়, খেয়ে নিন।

খাওয়ার গল্প আর বার বার করব না। এই প্রসঙ্গেই রামদুলালের কথাটা মনে এল বলে তোমাদের ভোজের বহরটার একটু ইঙ্গিত দিলাম। এক কথায় এরপর দু-বেলা এরকম নানা বিচিত্র পদ তৈরি হতে লাগল আমার জন্য।

রাত্রেও শুয়ে ঘুম আসে না। একে চাপ খাওয়া হয়ে গিয়েছে, তার ওপর মনে কেমন একটা অমঙ্গলের ভাব। আমাদের গাঁয়ের সেই সাধুর কথা মনে আছে তো? সে বলেই দিয়েছিল, আমার এ ধরনের ক্ষমতা হবে।

পরদিন একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটল। এইখানেই গল্পের আসল অংশের শুরু।

সকাল আটটা হবে। বৈঠকখানায় বসে আছি। রামদুলাল গিয়েছে স্নান করতে, শচী বাড়ি নেই। বিকেলে ক্ষীর দিয়ে কি একটা খাবার তৈরি হবে, তাই সে গিয়েছে খাঁটি দুধের সন্ধানে। বাড়ির ডানদিকের কোণে বারান্দার শেষে খুব সুন্দর একটা স্নানের ঘর আছে, জমিদার সখ করে বানিয়েছিল। তার মেঝে সাদা পাথরে বাঁধানো, বুক অবধি দেওয়াল মোজেক করা। কানাই চাকর সকালে পুকুর থেকে স্নানের জল তুলে তাতে এনে রেখেছে। পুকুরেও অনায়াসেই স্নান করা চলত। কিন্তু নতুন বাড়ি কেনা হয়েছে, সব কিছু ব্যবহার করা চাই তো! রামদুলাল সেখানেই স্নান করছে।

হঠাৎ দরজার কাছে একটা আওয়াজ শুনে দেখি রামদুলাল এসে ঘরের মধ্যে দাঁড়িয়েছে। তার মুখ ভয়ে বিকৃত। বেচারি কাঁপছে ঠকঠক্‌ করে। স্নান করতে করতে মাঝপথে বেরিয়ে এসেছে বোঝা যাচ্ছে। কাপড় ভেজা, গায়ে জল--মোছবার সময় পায়নি। বললাম---কি হয়েছে? ভয় পেলে নাকি?

রামদুলাল প্রথমটা কথাই বলতে পারে না। এই সকালবেলা কি দেখে অত ভয় পেল ও? ধমকে বললাম--কি হয়েছে বলবে কিনা?

ও বলল--আমার সঙ্গে আসুন।

পেছন পেছন গেলাম। স্নানঘরের দরজার কাছে এসে ভেতরে মেঝের দিকে আঙুল দিয়ে কি দেখিয়ে রামদুলাল বলল--ওই, ওই যে--

প্রথমে কিছু বুঝতে পারলাম না। সাদা পাথরে বাঁধানো সুন্দর পরিষ্কার মেঝে । কি দেখাচ্ছে রামদুলাল?

তারপরে দেখতে পেলাম জিনিসটা।

মেঝের একটা পাথরের টালিতে যেন আবছা একখানা মুখ ফুটে উঠেছে। ঠিক পুরো মুখ নয়--মুখের আদল মাত্র। চেষ্টা করলে বোঝা যায়। স্ত্রীলোকের মুখ। কারণ লম্বা চুলের আভাস দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সে মুখ সুন্দর নয়। কেমন যেন ভাঙাচোরা অবয়ব। যেন কষ্টে মুখ বিকৃত করে আছে।

এ আবার কি? মেঝের পাথরে কে ছবি আঁকল? কি দিয়ে আঁকল?

রামদুলালকে জিজ্ঞাসা করলাম--এ ছবি এখানে কি করে এল?

-- আজ্ঞে তা কি করে বলব?

--যখন বাড়ি কিনলে তখন ছিল না?

-- আজ্ঞে বাড়ি কেনার কথা কি বলছেন, আজ সকালে কানাই জল তুলে রাখছিল, আমি দাঁড়িয়ে তদারক করছিলাম--তখনও ছিল না। এই এখন চান করতে করতে হাতফসকে সাবানটা পড়ে গেল, তুলতে গিয়ে একেবারে চোখাচোখি! কি হবে ঠাকুরমশায়? বড় শখের বাড়ি--

বললাম--আচ্ছা তুমি আগে স্নান শেষ করে নাও। ভয় নেই, আমি এই দরজার কাছে দাঁড়িয়ে রইলাম।

ভয়ে ছিটকিনি না দিয়ে কোনমতে দরজা ভেজিয়ে বাকি স্নানটুকু সেরে বেরুল রামদুলাল। মানুষ ভয় পেলে কি রকম হয়ে যায় তা আজ দেখলাম। প্রথম দিন রামদুলালকে কত ব্যক্তিত্ববান পুরুষ বলে মনে হয়েছিল। কিন্তু যা ধরাছোঁয়া যায় না, এমন অপ্রাকৃত ঘটনার সম্মুখীন হয়ে সে ব্যক্তিত্ব কখন বাতাসে উবে গিয়েছে।

বৈঠকখানায় বসে রামদুলাল বলল--এসেই ব্যবসার অবস্থা খারাপ যাচ্ছে! বাজারে অনেক দেনা। এক ব্যাটা মাড়োয়ারীকে প্রায় সত্তর হাজার টাকার মাল সাপ্লাই করেছিলাম--তার দরুণ বিল সে কিছুতেই দিচ্ছে না। কেবল আজ-কাল বলে ঘোরাচ্ছে। মাড়োয়ারীর সঙ্গে কি আমরা পারি? আমারই ভুল হয়েছিল ওখানে মাল দেওয়া। কি করব, লোভে পড়ে গেলাম। এখন যদি বিল না আদায় হয়, তাহলে আমার ব্যবসা ডুববে। নালিশ করে টাকা আদায় করতে করতে তো আর ব্যবসা থাকবে না। এদিকে এই চিন্তা, এত টাকা দিয়ে বাড়ি যদি বা কিনলাম--এখন তাতে বাস করতে পারছি না। আমাকে আত্মহত্যা করতে হবে ঠাকুরমশায়।

বললাম---আরে দাঁড়াও। এত ব্যস্ত হলে চলবে কেন? ব্যবসায় লাভ-ক্ষতি, জোয়ার-ভাঁটা আছেই। ভেঙে পড়ার কিছু নেই। আর এ বাড়ির কথা বলি--আমার মনে হয় তোমাদের ভয়ের কিছু নেই।

-- ভয়ের কিছু নেই?

-- মনে হয়, না। ভেবে দেখ, যে আত্মাই এমন করুক না কেন, তার যদি তোমাদের ক্ষতি করবার ইচ্ছে থাকত, তাহলে সে তো তা অনায়াসেই করতে পারে। এতদিন চুপ করে আছে কেন?

রামদুলাল বলল--তাহলে ওই কান্নার শব্দ?

বললাম- হয়ত সেটা আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করবার জন্য। সে হয়ত কিছু বলতে চায়।

-- তাহলে এখন আমি কি করব?

-- তুমি কিছুই করবে না। আমি আরও কয়েকদিন থাকব। দেখি কি হয়। যা করবার আমিই করব।

শচীদুলাল এসে স্নানঘরের মেঝেতে ছবিটা দেখল। তবে সে বাপের চেয়ে সাহসী। ভয় পেলেও মুখে কিছু বলল না।

রাত্তিরে আমি সাবধানের মার নেই বলে বড় একঘটি জল নিয়ে বাড়ির চারিদিকে ছিটিয়ে সাধুর দেওয়া সেই মন্ত্রে গন্ডি দিয়ে রাখলাম। সেদিন রাত্তিরটা কারোই ভাল ঘুম হল না।

পরদিন সকালে উঠে আমি আর রামদুলাল গিয়ে দেখি স্নানঘরের মেঝেতে ছবিটা যেন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এদিক-ওদিক দু-একটা রেখা বেড়ে গিয়ে এখন বেশ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে মুখখানা। সমস্ত মুখে একটা যন্ত্রণার চিহ্ন আঁকা। মুখ, নাক, চোখ যেখানে যা থাকার কথা ঠিক যেন সেখানে নেই। সমস্ত ছবিটা কে যেন টুকরো করে ভেঙে সামান্য অদলবদল করে বসিয়ে দিয়েছে। ফলে একটা অমানুষিক কষ্টের চিত্র ফুটে উঠেছে।

আমি এগিয়ে ভেতরে গিয়ে পা দিয়ে ঘষে ছবিটা মুছে ফেলবার চেষ্টা করলাম। কিছুমাত্র উঠল না। অথচ সাদা পাথরে কালোরঙের কিছু দিয়ে আঁকা জিনিসটা। তবে উঠছে না কেন? মনে হচ্ছে ছবিটা যেন পাথরের ভেতরে রয়েছে। বাইরে থেকে ঘষে তোলা যাবে না।

এরপর থেকে প্রত্যেক দিন ছবিটা একটু করে স্পষ্ট হয়ে উঠতে লাগল। এখন বেশ বোঝা যায়, একজন অল্পবয়েসী মেয়ের ছবি। বেশ মিষ্টি দেখতে। কিন্তু কে যেন তাকে খুব অত্যাচার করেছে। ব্যথায়, কষ্টে তার মুখ বীভৎস হয়ে আছে। সত্যি, রামদুলালের আর দোষ কি? আমারই গা ছমছম করত সেদিকে তাকালে।

বেশ গরম পড়েছে। একদিন সন্ধ্যেবেলা আর সহ্য না করতে পেরে রামদুলালকে ডেকে বললাম--ওহে, তোমার কানাইকে বল তো একটু স্নানের জল দিতে। বড্ড গরম আজ, স্নান করে ফেলি--

-- আজ্ঞে জল তোলাই আছে, আপনি চলে যান।

ঠাণ্ডা জল। আরাম করে গায়ে জল ঢালছি। পায়ের কাছে মেঝেতে সেই ছবিটা। এই তিন-চার-দিনে ছবিটা আমাদের অনেকখানি গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে। না তাকিয়ে স্নান করে চলেছি। হঠাৎ আমার গা শিউরে উঠল।

সেই কান্নার শব্দটা!

এবার খুব কাছে। যেন এখানেই---এ ঘরেই কেউ কাঁদছে।

স্নানঘরে আমি একা। অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে। পায়ের কাছে পাথরে সেই মুর্তি আর বাতাসে করুণ কান্নার আওয়াজ।

গুমরে গুমরে কে যেন কাঁদছে কোথায়। তরুণী মেয়ের গলা।

বাইরে দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে রামদুলাল--ঠাকুরমশায়, ঠিক আছেন তো?

বললাম--ঠিক আছি। ভয় নেই। যাও ঘরে গিয়ে বোস, আমি আসছি।

আওয়াজটা এ ঘরেই হচ্ছে বটে। যেন আমার পায়ের তলা থেকে আসছে। আমার মাথায় তখন একটা বুদ্ধি এসেছে। কি করতে হবে ভেবে ফেলেছি।

আমি স্নান সেরে বেরোবার আগেই কান্নার আওয়াজ থেমে গেল।

ঘরে এসে রামদুলালকে বললাম--আচ্ছা যখন এই বাড়ি কেনো, তখন মালিকরা তোমাকে এ ব্যাপারে কিছু বলেনি? বাড়িতে এ রকম কান্নার শব্দ শোনা যায় বা কিছু?

-- না। তা বললে কি আর আমি বাড়ি কিনতাম?

-- তা বটে। আচ্ছা তোমার বিশ্বাসী চাকর ক’জন আছে কোলকাতার বাড়িতে?

রামদুলাল ভেবে বলল--জনা দুই।

তারা গোপন খবর চেপে রাখতে পারবে?

-- তা পারবে। প্রাণ গেলেও তারা আমাকে বিপদে ফেলবে না।

-- আর কানাই?

-- কানাইও বিশ্বাসী।

বললাম--কাল শচীকে কোলকাতায় পাঠিয়ে সেই চাকর দুজনকে এখানে আনাও। কাজ আছে।



এর পরের ঘটনা সংক্ষিপ্ত। পরের দিন শচী গিয়ে বাড়ি থেকে দুজন বলিষ্ঠ চাকরকে নিয়ে এল। তাদের নিয়ে স্নানঘরে গেলাম। রামদুলাল চুপ করে থাকতে জানে। এতক্ষণ কিছু জিজ্ঞাসা করেনি। এবার বলল--কি হবে ঠাকুরমশায়?

-- এখনই দেখতে পাবে। এ বাড়িতে শাবল আর কোদাল আছে?

-- তা আছে।

-- আনতে বল।

তিনজন চাকর শাবলের চাড় দিয়ে মেঝের কয়েকখানা পাথরের টালি তুলে ফেলতে তলার সুরকি আর মাটির সোলিং বেরিয়ে পড়ল। বললাম-- মাটি খোঁড়।

হাত চারেক মাটি খোঁড়া হতে একজন চাকর হঠাৎ অস্ফুট আর্তনাদ করে হাতের কোদাল ফেলে দিয়ে কাঁপতে লাগল।

রামদুলাল গর্ভের মধ্যে উঁকি দিয়ে ভীত গলায় বলল- ঠাকুরমশায়! এ কি ব্যাপার?

বললাম--কঙ্কাল তো?

-- কোথা থেকে এল?

-- পরে বলছি। আগে ওটা তুলতে বল।

আস্ত তোলা গেল না। তুলতে যেতেই হাড়গুলো খসে আলাদা হয়ে যেতে লাগল। কিছুক্ষণ বাদে মেঝেতে ছোট একটা হাড়ের স্তুপ হয়ে গেল।

এতক্ষণ বাদে কিশোরী বলল--তারপর?

-- তারপর আর কি? সেই হাড় বস্তায় করে এনে গঙ্গায় ফেলে দেবার পর ও বাড়িতে আর কোনদিন কান্নার আওয়াজ শোনা যায়নি। রামদুলাল আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল--কার কঙ্কাল ঠাকুরমশায়?

বললাম--এতদিন পরে তা আর বলা সম্ভব নয়। এদেরই পূর্বপুরুষদের মধ্যে কারও কাণ্ড আর কি! সেকালে জমিদাররা কি রকম অত্যাচারী হত জানোই তো! কাকে মেরে পুঁতে ফেলেছিল বলা কঠিন। বাড়ির বৌ হতে পারে, আবার গাঁয়ের মেয়েও হতে পারে। যেই হোক, তার আত্মা সদ্‌গতির জন্য কেঁদে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করত। গঙ্গায় দেওয়ায় মুক্তি পেয়ে গেল। আর হ্যাঁ, এ বাড়ি যারা তোমাকে বিক্রি করেছিল, তাদের ওপর রাগ কোরো না। তারা খুব সম্ভবত কিছুই জানে না। পূর্বপুরুষ যে অন্যায়টা করেছিল সে গোপনেই করেছে। সাক্ষী দাঁড় করিয়ে রেখে কেউ খুন করে না।

রামগোপাল বলল--ওরা কান্না শুনতে পেত নিশ্চয়, অথচ আমাকে বলেনি--সেটা তো একটা অপরাধ।

বললাম--ওরা কান্না শুনতে পেত কিনা সে বিষয়ে আমার সন্দেহ আছে।

-- কেন বলুন তো?

-- যাদের পূর্বপুরুষের হাতে মেয়েটি মারা গিয়েছিল, তাদের হাতে মেয়েটির আত্মা হয়তো মুক্তি পেতে চায়নি। তাই বাড়ি বিক্রি হবার পর তোমার কাছেই মুক্তি চেয়েছে। যাও, এ বাড়িতে আর ভয় রইল না। বরং একটি আত্মা সদ্গতির অভাবে কষ্ট পাচ্ছিল, তার আশীর্বাদ পেলে।

রামদুলাল আমাকে আদর করে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে পাঁচশোটা টাকা দিয়ে প্রণাম করল। আমি আপত্তি করেছিলাম, বাধা দিয়ে সে বলল--আপনি বুদ্ধি না দিলে আমরা কি মেঝে খুঁড়তে যেতাম?

এর দিন দশেক পরে রামদুলালকে আবার একবার দেখেছিলাম। আমার বাড়িতে এসেছিল দুই ছেলেকে নিয়ে, মুখে হাসি। বললাম--কি হে, কি খবর?

-- আজ্ঞে, আত্মার আশীর্বাদ সত্যিই আছে।

-- কি রকম?

রামদুলাল খুশির হাসি হেসে বলল--মাড়োয়ারী ব্যাটা গতকাল বিল পেমেন্ট করেছে।

তারানাথ গল্প থামাল। রাত বেড়ে চলেছে। রামদুলালের সত্তর হাজার টাকা হল বটে, কিন্তু আমাদের কাল আবার আপিস যেতে হবে। বিদায় নিয়ে বেরিয়ে বাড়িমুখো রওনা হলাম।

//সমাপ্ত//

No comments:

Post a Comment