লেখক: শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
চকবেড়ের গোহাটায় গরু কিনতে গিয়েছিল পানাই মণ্ডল। চকবেড়ে অঞ্চলটা তেমন চেনা নয় তার। যাতায়াতই নেই। তবে নামটা জানা ছিল। আর এই গোহাটাই পরগনায় সবচেয়ে বড়।
তার বউ বলে দিয়েছে, ওগো, আজকাল যে সব হাতির মতো বড় বড় জারসি গরু, পাঞ্জাবি গরু বেরিয়েছে ওগুলো কিনো না। ওই বিরাট গরু দেখলে বাপু ভয় করে। একটা লক্ষ্মীমন্ত দেখে দিশি গরু কিনে এনো। পানাই মণ্ডল গরুর মর্ম তেমন জানে না। এতকাল গাইগরু পোষার মতো অবস্থাই ছিল না তার! পর পর বছর চারেক ভালো বর্ষা হওয়ায় চাষটা কপালজোরে ভালোই হয়েছিল। তার ওপর নিমাই নস্কর নামে একটা চাষবাস পাশ করা ছোকরা এসে তাকে অকালের ফসল ফলানো শিখিয়েছে। সেইসব করে হাতে কিছু বাড়তি পয়সা চলে এল।
তাইতেই পাকা ঘর হল, একটা টিউবওয়েল বসাল, শ্যালো কিনে ফেলল, বউ ফুলুরানি বায়না ধরল, গরু না রাখলে বাড়ির লক্ষ্মীশ্রী আসে না। অতএব গরু একটা চাই।
তা সে আর বেশি কথা কি। ট্যাঁকে টাকা নিয়ে পানাই অগত্যা গোহাটায় চলে এসেছে। মুশকিল হল গরু সে ভালো চেনে না। তার জমি চাষ হয় ভাড়া করা ট্রাক্টরে। সুতরাং বলদ রাখারও ঝামেলা পোয়াতে হয়নি কোনও দিন। অভিজ্ঞতা না থাকলে ঠকে যাওয়া আর বিচিত্র কি।
সেই জন্য একজন জানবুঝওয়ালা লোককে সঙ্গে আনবে ভেবে পীতাম্বরকে ধরেছিল। কিন্তু পীতাম্বরের শাশুড়ির এখন-তখন অবস্থা, খবর পেয়ে সে জলেশ্বরে চলে গেছে। সুতরাং পানাই তার বড় শালা ঝিকুকে নিয়ে এসেছে। কিন্তু ঝিকু বলল, জামাইদা, গরুর বিষয়ে আমার তেমন জ্ঞানই নেই।
তবু দুই আনাড়িতেই এসেছে আজ।
চকবেড়ের গোহাটায় ঢুকে তাদের চোখ তো চড়কগাছ। সমস্ত জায়গাটা গরু- গরু গন্ধে একেবারে ভোঁ ভোঁ করছে। তেমনই ধুলো উড়ছে। গোবর আর গোচোনায় একেবারে ভাসাভাসি ব্যাপার। তার সঙ্গে হাজারে হাজারে মাছি আর পোকামাকড় একেবারে চেপে ধরেছে চত্তরটাকে। ঝিকু নাকে রুমাল চাপা দিয়ে বলে ওঠে - ওরে বাবা, এ তো দেখছি নরক গুলজার!
শুধু গরু নয়! নামে গোহাটা হলেও পাঁঠা-ছাগলের ব্যাপারীরাও বিস্তর জড়ো হয়েছে। সুতরাং দিশাহারা অবস্থা। বিস্তর খদ্দেরেরও আগমন ঘটেছে। ব্যাপার দেখে একটু ঘাবড়ে গিয়ে পানাই বলে, ওরে ঝিকু, এ তো আমাদের বাঁশবনে ডোম কানা অবস্থা রে! কেউ কি আর আমাদের পাত্তা দেবে!
ঝিকু আনাড়ি হলেও চালাক-চতুর। তার ওপর বি এ পাশ করে এম এ পরীক্ষার জন্য তৈরি হচ্ছে। বলল, লোকে যেন আনাড়ি বলে বুঝতে না পারে।
ঘোরাঘুরি করতে করতেই হঠাৎ একটা বেঁটেমতো লোক জুটে গেল সঙ্গে। চোখে-মুখে ভারী মোলায়েম গদগদ ভাব। চোখে ধূর্তামি। খুব মাখো মাখো গলায় বলল, গরু কিনবেন নাকি কর্তা? আমি হলুম গে লালমোহন, লোকে বলে গরুর জহুরি। তা কী গরু চাই? পছন্দসই যদি কিনিয়ে দিতে পারি তাহলে ওয়ান পারসেন্ট দালালি দিয়ে দেবেন।
পানাই একটু ভালো মানুষ গোছের, হয়তো রাজি হয়ে যেত, কিন্তু ঝিকু ফস করে বলে বসল, ওহে বাপু, আমাদের গরু নিয়েই কারবার, নবগ্রামে আমাদের গোশালা গিয়ে দেখে এসো, চোখ ট্যারা হয়ে যাবে।
লোকটা ভড়কাল না। বলল, তা তো বটেই। গোশালা যখন আছে তখন গরু চিনবেন বৈকি! তবে কিনা গোহাটায় অনেক বড় বড় গরুর ব্যাপারীও ঘোল খেয়ে যায় কিনা! গত হপ্তায় শিবেন মান্নার মতো পাকা লোককেও এক ব্যাপারী বুড়ো গরু গছিয়ে হাওয়া হল।
পানাই একটু ভয় খেয়ে বলল, তাহলে তো খুব ভাবনার কথা হে।
তা তো বটেই। তারপর ধরুন চোরাই গরুর ব্যাপার আছে, রোগী গরুর ব্যাপার আছে, বন্ধ্যা গরুর ব্যাপার আছে। গরু নিয়ে মহাভারত হয়ে যায় কর্তা। গত বিশটি বছর এই গোহাটার সঙ্গে লেপটে আছি। গো-শাস্ত্র এখনও পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারিনি।
পানাই মণ্ডল বলল, তা তো বটেই।
ঝিকু বলল, ঠিক আছে, ভালো গরু দেখিয়ে দেবে চলো। ভালো গরু যদি সস্তায় পাই তাহলে দালালি নয় বাপু, পঞ্চাশটা টাকা দিতে পারি।
লালমোহন মাথা নেড়ে বলে, তা হবে না কর্তা। অত কমে পেরে উঠব না। দালালি করে খাই, আমারও ঘরে বৌ-বাচ্চা আছে, খরচাপাতি আছে, এই দালালিই সম্বল। আরও জনা কুড়ি দালাল নানা এলাকা ভাগ করে কাজকারবার করছে, লড়ালড়ি তো কম নয় মশাই!
গাইগুঁই করে পানাই নিমরাজি মতো হল। ঝিকু লোকটার সঙ্গে বিস্তর দরাদরি করে হাফ পারসেন্টে রাজি করাল।
তবে লালমোহন লোকটা বেশ কাজের। প্রথমেই যে ব্যাপারীর কাছে নিয়ে গেল সে লোকটাকে দেখলে মায়া হয়। ভারী দীন-দুঃখী চেহারা, দুটি ছোটো গরু নিয়ে হাটের একটা এক টেরে কোনায় সকলের চোখের আড়ালে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল। গরু দুটোও ভারী ঠান্ডা, লোকটার মতোই।
দুটো গরুই ভারী পছন্দ হয়ে গেল পানাইয়ের। তার মধ্যে সাদায় বাদামি ছোপওলা গরুটা যেন তার দিকে চেয়ে চোখের ভাষায় কিছু বলতে চাইছিল।
সে ব্যাপারীকে বলল, এটির কত দাম নেবে গো ব্যাপারী?
রোগাভোগা মানুষটা ক্ষীণ গলায় বলে, যা ভালো বুঝবেন দেবেন।
ঝিকু আর লালমোহন মাঝখানে পড়ে বিস্তর ঝামেলা পাকিয়ে তুলল। লালমোহন বলল, ছ' হাজারে ছেড়ে দাও গো ব্যাপারী।
ঝিকু ফুঁসে উঠে বলল, তার মানে?
তুমি দর হাঁকবার কে হে বাপু? দালালি চাও সে পরে দেখা যাবে। দরদাম তো আমরা করব। তুমি দূরে গিয়ে দাঁড়াও।
লালমোহন বলল, এ গরুর দাম আট-দশ হাজারের নীচে নয় কিন্তু। তোমাদের ভালোর জন্যই বলছিলাম।
তোমাকে আর আমাদের ভালো দেখতে হবে না। আমাদের ভালো আমরা বেশ বুঝি।
লালমোহন যে সুবিধের লোক নয় তা বুঝে নিতে বেশি সময় লাগল না। কারণ লালমোহন বলে বসল, ব্যাপারীরা পেটের দায়ে অনেক সময় কম দামে গরু বেচে দেয় বটে, কিন্তু সেটা ধর্মত ন্যায্যত ঠিক নয়! গরুর একটা ধরাবাঁধা দাম তো আছে হে বাপু!
ঠিক এই সময়ে সবাইকে চমকে দিয়ে একটা গুরুগাম্ভীর কন্ঠস্বর বলে উঠল, দাম চার হাজার টাকা।
লালমোহন চমকে উঠে চারদিকে চেয়ে দেখল, তারপর রুখে উঠে বলল, চার হাজার! বললেই হল চার হাজার! কে বলল কথাটা শুনি?
কিন্তু কেউ কোনও সাড়াশব্দ করল না আর।
কাঁচুমাচু মুখে গরুর ব্যাপারী পানাইকে বলল, আজ্ঞে কর্তা, ওই চার হাজার দিয়েই গরুটা নিয়ে যান। বড় ভালো গরু।
পানাই বলল, তাহলে গরুটা বেচছো কেন হে? রেখে দিলেই তো পারতে।
লোকটা মাথা নেড়ে বললে, গরু তো আমার নয় বাবু। গরুর মালিক পরমেশ্বর রায়। তাঁর গোয়ালে অনেক গরু। গরু বেশি হলে বেচে দেন। আমি হলুম তাঁর রাখোয়াল। পয়সা থাকলে আমিই কিনে নিতুম মশাই। কিন্তু আমাকে বেচলেও চার হাজার টাকা উঠবে না। তবে বলে রাখছি বাবু, গরুটা হাতছাড়া করবেন না। আপনাকে দেখলে ভালো লোক বলে মনে হয়, তাই বলছি।
লালমোহন তড়পে উঠে বলল, ও তুমি পরমেশ্বর রায়ের রাখাল। দিনে দুপুরে তাকে ঠকাচ্ছো? দাঁড়াও, আজই পরমেশ্বরবাবুর কাছে গিয়ে তোমার নামে নালিশ জানিয়ে আসব।
ঝিকু তেড়ে উঠে বলল, তুমি কার দালাল বলো তো হে লালমোহন? আমাদের কাছে দালালি চাইছো, আর আসল দালালি করতে লেগেছে গরুর মালিকের? তুমি তো ফেরেববাজ লোক হে! দু'মুখো সাপ।
ফের সেই গমগমে গলাটা বলে উঠল, ও কিন্তু গরুচোর।
লালমোহন রাগে একটা লাফ দিয়ে চেঁচিয়ে উঠল, কে, কে বলল কথাটা। কার এত আস্পর্ধা?
কেউ অবশ্য টুঁ শব্দটিও করল না।
লালমোহন আগুন চোখে সকলের মুখের দিকে চেয়ে দেখে বলল, এ হাটে আমার সঙ্গে শত্রুতা করে কেউ পার পাবে না। এই গোহাটায় আমার কথাই আইন। এই গরুর দাম ছয় হাজার টাকার এক পয়সা কম নয়। কিনতে হয় কেনো, নইলে কেটে পড়ো।
ঝিকু ঘুষি পাকিয়ে বলে, বললেই হল?
পানাই মণ্ডল ভীতু মানুষ, তাড়াতাড়ি দুজনের মাঝখানে পড়ে বলল, হাঙ্গামায় কাজ নেই বাপু, গরু আমি আর কিনছি না। গরু কেনার এত ঝামেলা জানলে কে এত দূরের গোহাটায় আসত। ঘাট হয়েছে লালমোহনবাবু, আমি গরু নেবো না।
সঙ্গে সঙ্গে সেই গুরুগম্ভীর গলায় ফের যেন দৈববাণী হল, ও গরু তোমার। নিয়ে যাও। লালমোহন পাজি লোক।
লালমোহন দিশাহারার মতো চারদিকে চাইল। কিন্তু কথাটা কার মুখ থেকে বেরোল সেটা বুঝতে পারল না। চারদিকে বিস্তর ক্রেতা-বিক্রেতা, ফড়ে দালালের ভিড়, গোলমালে কান পাতা দায়। এর মধ্যে এই বাজ ডাকা গলায় কে মাঝে মাঝে কথা কয়ে উঠছে তা সে বুঝতে পারছে না।
হঠাৎ মস্তানি ঝেড়ে ফেলে সে পানাইয়ের দিকে হাত বাড়িয়ে বলল, দিন মশাই, ওই চার হাজার দরের কমিশনটা দিয়ে ফেলুন তো। তারপর গরু নিয়ে চলে যান।
পানাই গোলমাল এড়ানোর জন্য ট্যাঁকে হাত দিয়েছিল টাকাটা দিয়ে ফেলবে বলে। কিন্তু আচমকাই শান্ত, ছোটোখাটো গরুটা এগিয়ে এসে দুম করে একটা প্রবল ঢুঁসো মেরে দিল লালমোহনকে। ডিগবাজি খেয়ে পড়ে লালমোহন "বাবারে" বলে চেঁচিয়ে চোখ উল্টে ফেলল।
গরুর ব্যাপারী ভারী অবাক হয়ে বলল, বড় আশ্চর্য কাণ্ড মশাই। সাবিত্রী বড় ঠান্ডা স্বভাবের গরু। কখনও কাউকে ঢুঁ দেয়নি আজ অবধি। তা যাই হোক, এসব কাণ্ড দেখে বড় ঘাবড়ে গেছি। গরু আপনিই নিন।
খুশি মনে টাকা গুনে দিয়ে সাবিত্রীকে নিয়ে হাট ছেড়ে বেরিয়ে পড়ল পানাই। মাঠের ভিতর হাঁটা পথ ধরে পানাই বলল, হ্যাঁরে ঝিকু, কাণ্ডটা কিছু বুঝলি?
ঝিকু মাথা নেড়ে বলল, না জামাইদা, অশৈলী কাণ্ড। কথাগুলো কে বলল বলো তো!
ঠোঁট উল্টে পানাই বলল, কিছুই বুঝলুম না, মনে হল দৈববাণী-টেববাণী কিছু হচ্ছে, একটু ভয়-ভয় করছে যেন।
তা আমারও কেমন যেন গায়ে কাঁটা দিচ্ছিল। কিন্তু জামাইদা, চারদিকটা কেমন হঠাৎ থম মেরে গেছে দেখছো?
তাই তো রে। আকাশের রংটাও তো ভালো নয়। ঝড় আসবে বুঝি। ঘূর্ণিঝড় এলে এরকমটা হয়। এত বড় ফাঁকা মাঠে ঝড়ের মুখে পড়লে যে বিপদ হবে রে!
ছোটো জামাইদা।
ছোটার কি উপায় আছে! গরুটা রয়েছে না!
গরুটা তোমার ট্যাঁটন আছে জামাইদা। লালমোহনকে কেমন ঢুঁসোটা মারল বলো!
সেইটেও চিন্তার কথা রে! এত ঠান্ডা স্বভাবের গরু হঠাৎ এমন ক্ষেপে গেল কেন বল তো!
গরুটা এলেবেলে গরু নয় জামাইদা।
কিন্তু পা চালাও, ঝড়ের শব্দ শুনতে পাচ্ছো? উড়িয়ে নিয়ে যাবে কিন্তু!
খোলা মাঠে ঝড়টা একেবারে উন্মাদের মতো ধেয়ে আসছিল। দূর থেকেই তার ডাকাতের মতো হুঙ্কার শোনা যাচ্ছিল। সঙ্গে একটা গুম গুম মেঘ ভাঙা আওয়াজ আর বাজের ঝিলিক।
হঠাৎ দড়িতে একটা হ্যাঁচকা টান পড়ায় পড়ো-পড়ো হয়ে ছুটতে লাগল পানাই। চেঁচিয়ে বলল, ঝিকু, ধর আমাকে, গরুটা পালাচ্ছে যে।
ঝিকু এসে তার একটা হাত চেপে ধরল বটে, কিন্তু আটকাতে পারল না।
গরুর টানে দুজনেই প্রাণপণে ছুটতে লাগল এবড়ো-খেবড়ো মাঠের ওপর দিয়ে। প্রচণ্ড বাতাস আর ধূলোয় দিক ঠিক রইল না। একটা ছোটোখাটো গরুর গায়ে যে এত জোর আর এত বেগে ছুটতে পারে সেটা তাদের বিশ্বাসই হচ্ছিল না।
কিন্তু ঝড়টা তাদের পেড়ে ফেলার আগেই সেই গরুটা মাঠটা আড়াআড়ি পার হয়ে একটা পোড়ো বাড়ির মধ্যে এনে ফেলল তাদের। চারদিকে বড় বড় গাছ। তাতে আড়াল হওয়া একটা পড়ো-পড়ো বাড়ি। তবে দেউড়ির পর একখানা দালান গোছের জিনিস দাঁড়িয়ে আছে। শালা-ভগ্নীপোত গরু সমেত ঢুকে পড়ল সেখানে। আর তখনই বাইরে প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ল। কয়েকটা গাছ উপড়ে প্রায় উড়ে গিয়ে দূরে আছড়ে পড়ল। ঘরটাও থরথর করে কেঁপে উঠছিল বাতাসের ধাক্কায়। ভারী হতভম্ব হয়ে তারা দাঁড়িয়ে রইল শুধু।
ঝড় যখন থামল তখন অন্ধকার হয়ে এসেছে। বাইরে বেরিয়ে কিন্তু, তারা কোথায় এসেছে আর কোনদিকে গেলে গাঁয়ে পৌঁছোনো যাবে তা ঠাহর করতে পারল না। অন্ধকারে চারদিকটা একদম লেপাপোঁছা।
ওরে ঝিকু, এ তো বড় বিপদেই পড়া গেল।
তাই তো জামাইদা! এই অন্ধকারে কোনদিকে যাওয়া যায়?
হাতের দড়িতে মৃদু টান পড়তেই হাঁটতে হাঁটতে পানাই বলল, আয় ঝিকু, সাবিত্রীর পিছু পিছু যাই চল। ঝড়ের হাত থেকে বাঁচিয়েছে। কি জানি বাপু, গরুটা বোধহয় সাক্ষাৎ ভগবতী।
আশ্চর্যের বিষয়, ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই গরু নিয়ে তারা গাঁয়ের চৌহদ্দিতে ঢুকে পড়তে পারল।
ঝিকু, সাবিত্রী কি করে আমাদের গাঁ চিনল বলতে পারিস?
না দাদা, আমার মাথা ঝিমঝিম করছে।
বাড়ি আসতেই শাঁখ আর উলুধ্বনি দিয়ে পানাইয়ের বউ গরুকে বরণ করে চাল কলা আরও কি সব মেখে খেতে দিল। বাচ্চারা এসে গরুর গায়ে হাত বুলোতে লাগল।
পানাই বলল, লক্ষ্মী গরু চেয়েছিলে, কপালজোরে তাই মিলিয়ে দিয়েছেন ভগবান। মা লক্ষ্মীকে পেন্নাম করো সবাই।
সাবিত্রী ভারী খুশি হয়ে ডাক ছাড়ল, হাম্বা।